শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
শিরোনাম: বিএটি বাংলাদেশের ৫১তম এজিএম অনুষ্ঠিত       আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ডেবিট কার্ড চালু       ফেঞ্চুগঞ্জের তজমুল আলী চত্বরে এমপি হাবিবের পক্ষে ইফতার বিতরণ       মিনিস্টারের ‘শত কোটি টাকার ঈদ উপহার’ অফারে একটি রেফ্রিজারেটর কিনে আরও একটি রেফ্রিজারেটর ফ্রি পেলেন মোঃ আসাদুজ্জামান সুমন       গ্যালাক্সি এ১৫ ৫জি - দুর্দান্ত সব ফিচার ও অসাম ডিসপ্লে নিয়ে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ সিরিজের নতুন চমক বাজারে       মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে       আইসিএসবি কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত      
ঢাকার দুই সিটিতে আ.লীগের ১১২ বিদ্রোহী প্রার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:০০ এএম আপডেট: ৩১.০১.২০২০ ১১:২০ এএম |


ঢাকার দুটি সিটি নির্বাচন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৭৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রার্থী হয়েছেন; যাঁদের ১০ জন বর্তমান কাউন্সিলর। সাংসদের ছেলেও বিদ্রোহী। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৭টিতেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের স্বদলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ১১২ জন, যাঁদের মধ্যে এক সাংসদের ছেলেও আছেন। এ ছাড়া ১০ জন বর্তমান কাউন্সিলর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৭২ জন। আর ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ওয়ার্ড ৫৪টি। এর মধ্যে ৩৫টিতে ৪০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। সবাই নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচার-জনসংযোগ করছেন। গত ২৯ ডিসেম্বর দুই সিটির কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনের তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। পরে সাতটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। দলীয় হুঁশিয়ারির পর অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও শেষ পর্যন্ত ৭৭টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে গেছেন। এর মধ্যে অনেক ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন।  তাঁদের মধ্যে ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ হাজি মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমও রয়েছেন। তিনি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। এ ওয়ার্ডে একসময় হাজি সেলিম কমিশনার ছিলেন। এবার এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. হাসান, যিনি হাজি সেলিমের ভাগিনা। মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যেতে ইরফানকে একাধিক চিঠি দিয়েছে দল। কিন্তু তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ির মধ্যেও দক্ষিণের দুটি সাধারণ (২৫ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড) ও দুটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন।  ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট হবে। দুটিতেই ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট হয় নির্দলীয়ভাবে। যদিও ঢাকার দুই সিটিতে কাউন্সিলর পদেও প্রার্থীদের দলগত সমর্থন দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।  বিদ্রোহী ১১ কাউন্সিলর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এমন ৩৬ জন এবার দলীয় সমর্থন পাননি। তাঁদের মধ্যে উত্তরে চারজন ও দক্ষিণে সাতজন দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন। উত্তরের বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জহিরুল ইসলাম। সেখানে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পল্লবী থানার সহসভাপতি জিন্নাত আলী মাদবর। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহসভাপতি হুমায়ুন রশিদ। সেখানে দলীয় প্রার্থী হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মইজ উদ্দিন। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাতারকুল ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মতিন। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামও নির্বাচনী মাঠে আছেন। তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনিছুর রহমান ওরফে নাঈম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। সেখানে দলীয় সমর্থন পান দক্ষিণখান ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিউদ্দিন মোল্লা। ঢাকা দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তারিকুল ইসলাম, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল শাহ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নুল হক ওরফে মঞ্জু, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন খান, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বহিষ্কৃত কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তাঁদের মধ্যে চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে আছেন ময়নুল হক। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৫ সালে দলীয় সমর্থন পেয়ে নির্বাচন করেছি। এবার প্রথমে দল সমর্থন দেয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার দলের উচ্চপর্যায় থেকে নির্বাচন করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম দলের এই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১৫ সালে দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং জয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিল্লাল শাহ। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের কোতোয়ালি থানা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তবে এই ওয়ার্ডে এবার দলের সমর্থন পেয়েছেন আবদুল মান্নান। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দক্ষিণ সিটির প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এবারও ৩৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গেছে। দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন খিলগাঁও থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম। তাঁর বিপরীতে মাঠে রয়েছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসম্পাদক শাহাদাত হোসেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে দলের সমর্থন পেয়েছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর সুলতান মিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করে দল। সুলতান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দল ইসমাইল জবিউল্লার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলেছে। কিন্তু তিনি এখনো মাঠ ছাড়েননি। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের লালবাগ থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তিনি এর আগে দুবার এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে হেরেছেন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর ওমর-বিন-আব্দাল আজিজ। তবে এই ওয়ার্ডে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক সাগর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন নিয়েই নির্বাচন করছি। আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য দল থেকে কেউ কিছু বলেনি।’ ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সালেহিন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন দলের লালবাগ থানার সাবেক নেতা কামাল উদ্দিন (কাবুল)। তিনি এর আগেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরেছেন। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সমিন রায় ও সদস্য বাবুল দাস। তাঁরাও নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী আবুল কালামের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ফজলুল হক। উত্তর সিটির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পান ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থন না পেয়েও প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন। এই ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন তাইজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান। এই ওয়ার্ডে দলের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন মিরপুর থানা সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর আলী ও সহসভাপতি গাজী আলিয়ার রহমান। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম দলের সমর্থন পেয়েছিলেন জাহিদুর রহমান। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিছুদিন পর এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. নাছিরকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি জাহিদুর রহমান। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন তেজগাঁও থানা কমিটির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দুজন। তাঁর হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মীর আশরাফ উদ্দিন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোকছেদ আলী মোল্লা। মোকছেদ আলী মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সমর্থন চেয়ে আবেদন করেছিলাম, পাইনি। পরে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।’ ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী হলেন বর্তমান কাউন্সিলর শামীম হাসান। তিনি দলের তেজগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদক। বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে আছেন ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা। শামীম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসুদ রানাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছিল মহানগর কমিটি। কিন্তু তা তিনি আমলে নেননি।’ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর অনেকে শক্তভাবেই মাঠে আছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। দলের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ তবে ঠিক কবে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি। এর আগে বিভিন্ন সিটি র্কর্রপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে, কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ কারণে যেখানে সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা বেশি থাকে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে উন্মুক্ত নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পদটিতে দলীয় প্রার্থী সমর্থন দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী যাচাইয়ে সুযোগ কম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে অনেক সময় মারামারি হয়। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যান না। তাই কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী সমর্থনের সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরে আসতে হবে।জয়-পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে ঢাকা সিটিতে এই প্রথম ভোট দিবে সব কটি কেন্দ্রে ইভিএম এর মাধ্যমে।তবে সুষ্ঠ ভোটের কামনা করছেন সকল ভোটারা।নির্ভয়ে ১ ফেরুয়ারির নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তারা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।তবে বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ না দিয়ে ইভিএমে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে যেমন সমালোচনা আছে তেমনই এই যন্ত্র ভোট গ্রহণের সময় বিপত্তিতে পড়তে পারে আছে সে আশঙ্কাও। গত জাতীয় নির্বাচনে ঢাকার দুটি আসনের (ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩) সব কটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হলেও রাজধানীর বেশিরভাগ অংশের ভোটারের ইলেকট্রনিক মেশিনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। 

ইভিএম কীভাবে কাজ করে তা ভোটারদের অবহিত করতে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) অনুশীলনমূলক ভোটের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।কয়েকটি কেন্দ্র সরেজমিনে ঘুরে নানা বিপত্তি দেখা গেছে।এর মধ্যে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাই সঠিকভাবে মেশিন চালাতে পারছেন না। আবার কোনো ধরনের গড়বড় হলে কীভাবে ঠিক করা যাবে তার কোনো প্রশিক্ষণ নেই তাদের। পাশাপাশি বিদ্যুত্ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কার কথাই প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, প্রথমদিকে ইভিএমে ত্রুটি থাকলেও এবার প্রস্তুতি বেশ ভালো আছে।

বিকালে মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ইভিএমের অনুশীলনমূলক ভোটের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এসময় যে কয়জন ভোট দিতে এসেছেন তাদের কেউ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া একবারে ভোট দিতে পারেনি।এসময় কর্মকর্তাদের অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন ভোটের দিন অনেক ঝামেলা হবে।

এদিকে ইভিএমে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারদের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ ভোটাররাই।প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের আঙুলের ছাপ না মিললেও প্রিজাইডিং অফিসার শতকরা এক ভাগ ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে পারবেন। প্রয়োজন মনে করলে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে এই ভোটের সংখ্যা আরো বাড়িয়েও নিতে পারবেন। এখন প্রিজাইডিং অফিসাররা এই সুযোগ কাদের দেবেন বা কীভাবে দেবেন সেটা নিয়েও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।এছাড়া তারা এই সংখ্যা বাড়িয়ে নিলেও কেউ জানতে পারবে না বলে মনে করেন তারা।এটা বন্ধ রাখার পক্ষেই মত সাধারণ ভোটারদের।

গতকাল বেলা ১টার দিকে শুক্রাবাদের নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নিচ তলায় নারী ভোটারদের কক্ষে ইভিএম সেটই করা হয়নি। কর্মকর্তারা জানালেন কোনো ভোটার আসেনি তাই তারা একটু বিলম্বে শুরু করছেন। ঐ কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় পুরুষ ভোট কক্ষে মেশিন বসানো হয়েছে। কিন্তু সেটি ঠিকমতো কাজ করছিল না। বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ঐ কক্ষের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা হন্যে হয়ে অন্য কক্ষের কর্মকর্তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।কেন বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তা ঐ কর্মকর্তা বুঝতে পারছিলেন না।একজন বয়স্ক ভোটার এসেছিলেন পরীক্ষামূলক ভোট দিতে। তিনি একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে চলে যান।

বেলা ২টার দিকে পাশের শুক্রাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা কয়েকজন নারী ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ঐ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ফায়াদ হোসেন বলেন, ‘আমরা একবারই প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কাজটা খুবই সহজ। কিন্তু মেশিন গড়বড় বলে ঝামেলাতে পড়তে হবে। আমরা ঠিকমতো চালু করতে পেরেছি। আশাকরি, ঝামেলা হবে না।’ ঐ কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া নারী ভোটাররা হাতের ছাপ দিয়েই ভোট দিয়েছেন। তাদের ঝামেলা না হলেও অনেকেই শঙ্কার কথা বলেছেন।

ইভিএমে ভোটপ্রদান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর ব্যালট ইউনিটে যে কোনো গোপন বুথে ঢুকে ভোট দিয়ে যেতে পারেন। এজন্য ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংযুক্ত করা উচিত ছিল। এছাড়াও ইভিএমের প্রদর্শনীতে এসে ভোটদান সহজ হওয়ার কথা অনেকে বললেও কারো কাছে তা ঠেকেছে জটিল।

উত্তর মুগদাপাড়া থেকে দক্ষিণ মুগদাপাড়ার কাজী জাফর আহমেদ উচ্চবিদ্যালয় প্রদর্শনীতে এসে ব্যবসায়ী এ কে আজাদ অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ইভিএম ভোটিং দেখে নিজে চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘যা দেখলাম, তাতে জটিল মনে হয়েছে। আমি বুঝি নাই। আমি তো তাও একটু শিক্ষিত, যারা অশিক্ষিত তারা তো আরো বুঝব না।’

আব্দুল রহিম নামে একজন ভোটার জানান, ভোটকেন্দ্র দখল হলে ইভিএমও নিরাপদ নয়। সেক্ষেত্রে ইভিএমে পড়তে পারে জালভোট। ইভিএমের দুটি ইউনিট। একটি কন্ট্রেল ইউনিট এবং অন্যটি ব্যালট ইউনিট। এর মধ্যে ব্যালট ইউনিটটি অরক্ষিত। কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর গোপনকক্ষে সংরক্ষিত ব্যালট ইউনিটে গিয়ে একজনের ভোট দিতে পারেন অন্যজন। ফলে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল কামাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই সিটি ভোটে প্রায় ৩৫ হাজার ইভিএম মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২৮ হাজারের মতো ইভিএম মেশিন সরাসরি ভোটকেন্দ্রগুলোতে ব্যবহার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকিগুলো বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া ইভিএমের টেকন্যিকাল সাপোর্টের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর দুই জন করে টেকনিক্যাল সদস্য মোতায়েন থাকবে। বিগত সময়ে ইভিএমে ভোটের রেজাল্ট আসতে দেরি হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার এই সমস্যা আর হবে না। দ্রুত রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

হতাশ ইসি মাহবুব :

গতকাল বিকাল ৩টার দিকে শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে মক ভোটিং পরিদর্শনে যান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সেখানে ভোটের অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একজন নতুন ভোটার। আমি কখনো ইভিএমে ভোট দেইনি। আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন ভোটারের মতো কথা বলেছি। একটা ইউনিটে তারা ১২টায় এসেছেন। তিন ঘণ্টায় মাত্র এক জনকে তারা শেখাতে পেরেছেন, এক জনের মাত্র ভোট নিয়েছেন। এটার ওপরে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

আশাবাদী সিইসি :

ইভিএম নিয়ে ভালো প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার (জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) ইভিএমে অনেক ত্রুটি ছিল। এরপর সেগুলো সংশোধন করে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’ গতকাল বিকালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত ‘ইভিএমে মক ভোটদান প্রদর্শনী অনুষ্ঠান’ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

ইভিএমের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, ইভিএমে ভোটদানের পর ভোটার কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কেননা কোন প্রতীকে ভোটারের ভোট পড়েছে তা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে প্রদত্ত ফিঙ্গার ম্যাচিং ক্ষমতা বন্ধ করা উচিত।






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com