শিরোনাম: |
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া উদ্বেগজনক , সংকট মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত ?
![]() |
![]() বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া উদ্বেগজনক , সংকট মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত ?করোনা ভাইরাস দেশে দেশে করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশগুলোতে এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। তাদের মতে, চীন ও ইউরোপের পর দক্ষিণ এশিয়াই হবে ‘হট স্পট। এরপরই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক বুধবার এটি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে প্রয়োজন সেখানে শাটডাউন করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেটি সরকার নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। জনগণকেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন করা যায়নি। করোনাভাইরাস প্রথমে চীনে আঘাত হানলেও দুই মাসের ব্যবধানে তা বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত অর্থে নতুন ভাইরাস মানবগ্রহকে ভয়াবহ বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, যার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। এই সংকটের যেমন দেশীয় দিক আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক দিক। কোনো একক দেশের পক্ষে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা না গেলেও দেশীয় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশকেই। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মাত্র ১৪ জন আক্রান্ত হওয়া এবং 2 জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকার শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রয়েছে এমন দাবি করে আসছে। বলা হয়েছে, যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা হয় বিদেশ থেকে এসেছেন অথবা তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন। সরকারের আশ্বাস বা পরিসংখ্যান আমাদের কোনোভাবে আশ্বস্ত করে না। গত কয়েক মাসে কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশে এসেছেন। এ ছাড়া বহু বিদেশিও নানা উপলক্ষে এখানে এসেছেন। রোগ শনাক্ত করার উপায় হলো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা। কিন্তু সেই কাজটি ঠিকমতো করা হয়নি। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে শুধু একটি কেন্দ্রের মাধ্যমে এই ভাইরাস শনাক্ত করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে সরকার। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতেও আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। এই ভাইরাসের বিস্তার রোধের একমাত্র পথ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ যতটা সম্ভব সীমিত করা। বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আমাদের দেশে লোকজন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই চলাচল করছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। সরকারি সেই সিদ্ধান্ত নিতেও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগিয়েছে। ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা। এ নিয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় আছেন। অন্যদিকে এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন ২১ মার্চ তিনটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন এবং ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেন মরিয়া হয়ে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা যেখানে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ বন্ধের কথা বলছেন, সেখানে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত থাকায় জনগণ, প্রার্থী ও দলের নেতা-কর্মী সবাইকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। জনগণ কি এই পরিস্থিতিতে ভোট দেওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে? ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে আদালতে রিট হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সুমতি হোক। আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য পিক টাইম। করোনা ভাইরাস কমিউনিটি লেভেলে ছড়াচ্ছে, সংক্রামিত হচ্ছে অনেক মানুষ। দেশের ভেতরে এখন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। গত সপ্তাহেও যারা দেশে ফিরেছেন তাদের মাধ্যমেও যদি এটা ছড়িয়ে পরে তাহলে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের ভেতরেই প্রকাশ পাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা এখন আর অস্বীকার করা যাবে না। যদি মনে করা হয় ছড়াচ্ছে না—তাহলে এটা বিরাট ভুল করা হবে। সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ স্প্রেডিং টাইমে প্রবেশ করছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা ইতোমধ্যেই দেশে এসেছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তবে এখনও সময় আছে, সরকার যদি কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশ ফেরতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে পারে তাহলে কিছুটা রক্ষা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ তিন মাস সময় পেয়েছে। অথচ কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। এখন তারা হাসপাতাল প্রস্তুত করছে, আইসিইউ ব্যবস্থা করছে, সরঞ্জাম আনছে বিদেশ থেকে। অথচ শুরু থেকে দেশে কিট নেই, হাসপাতাল প্রস্তুত নয়, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই বলে সতর্ক করা হয়েছে। তারা কোনও কথাই কানে নেননি, এখন তার মাশুল দিতে হবে সবাইকে মিলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে মানুষগুলোকে হোম কোয়ারেন্টিনে গিয়েছেন তারা কিন্তু আসলে কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না। তাদের থেকে এখন এটা ছড়াবে। আর এটা ছড়ালে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পাবে। ভাইরোলজির ভাষায় এটা পিক টাইম। নিশ্চিতভাবেই আমরা এক ‘ক্রুশিয়াল টাইমের’ মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি মন্তব্য করে প্রখ্যাত এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, বাংলাদেশ এখন স্প্রেডিং টাইমে প্রবেশ করছে। আর এজন্য সরকারকে আমাদের সবার সাহায্য করা দরকার। উপজেলা-জেলা হাসপাতালগুলোতে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথম থেকেই যদি হোম কোয়ারেন্টিন না করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হতো তাহলে ঝুঁকি নিতে হতো না। দেশের টেস্টিং ফ্যাসিলিটি আরও বিস্তার করতে হবে। শুধু জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না রেখে আরও কয়েকটি জায়গাতে পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলে, আরও ল্যাবরেটরিকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সেটা রোগী নির্ণয় করতে সাহায্য করবে। চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যদি সংক্রমিত হয়ে দেশে একজনও প্রবেশ করেন তারপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী বলা যায়, দেশে করোনা ছড়িয়ে গেছে। রোগী বাড়বেই, এখন আর আমাদের একে আটকানোর কিছু নেই। ইনফেকশন রেটকে স্লো করতে পারি, কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। তবে এখনও বলব, দেশে কেউ এখনও এ অবস্থার জন্য ‘রেডি’ নন। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা,আইসোলেশন ইউনিট, আইসিইউসহ অন্যান্য সব ব্যবস্থাপনা নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি, নয়তো সামনে ভীষণ বিপদ—বলেন আতিক আহসান। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রকাশ হতে সাধারণত ১-২ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। সাধারণ সর্দি কাশির সঙ্গে মিল থাকায় পরীক্ষা না করে শুধু শারীরিক লক্ষণ দেখে এটি আলাদা করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রথম রোগী সনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর গত ১৪ দিনে শনাক্ত হয়েছে ২৪ জন, মারা গেছেন ২ জন। প্রথম থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করার দাবি জানালেও সেটা মানা হয়নি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা বিদেশ থেকে আসা অথবা তাদের দ্বারা সংক্রমিত। অথচ তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিন করে রাখলে দেশ এ হুমকিতে পড়তো না। ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এখনও সময় আছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে একটি জাতীয় রেসপন্স টিম গঠন করা হোক। এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। একইসঙ্গে এ টিমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সম্পৃক্ত করা হোক, একজন বিশেষজ্ঞকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আগের জনের মতোই তার পরিচয়ও গোপন রেখেছে সরকার। তবে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকার একটি সরকারি মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই মৃত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হলো না। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যাওয়া এ ব্যক্তির মরদেহ গতকাল সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দাফন করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা এ শিক্ষাবিদের চিকিৎসা, মৃত্যু ও দাফন-সংক্রান্ত সব তথ্য বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন তার নিকটাত্মীয়রা। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১০ দিনের রোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে ওই শিক্ষাবিদের পরিবার থেকে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে করোনা নিয়ে সরকারি অব্যবস্থাপনার চিত্রও। তার পরিবারের অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাননি আক্রান্ত ব্যক্তি। পরে উচ্চপর্যায়ের তদবিরেই করোনা পরীক্ষার সুযোগ মিলেছিল আক্রান্তের। করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পরের দিনই বরেণ্য ওই শিক্ষাবিদের মৃত্যু হলো। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। এজন্য নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলেন তিনি। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কী রোগ হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্য রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই পরীক্ষার সুযোগ পাননি। গত সোমবার থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। এ শিক্ষাবিদের উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত সন্তানরা পিতাকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এ শঙ্কা থেকে ১৭ মার্চ সকাল থেকে রোগীর স্বজনরা যোগাযোগ করেন আইইডিসিআরে। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া হটলাইনে বহু চেষ্টা করে সংযোগ পাওয়া যায়। রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত শোনার পর আইইডিসিআর থেকে বলা হয়, কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক জ্বর-সর্দি জানিয়ে রোগীকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। কিন্তু ওইদিন (১৭ মার্চ) দুপুর থেকে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে ওই শিক্ষাবিদের। বাধ্য হয়ে রোগীকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয় রোগীকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় ওইদিন সন্ধ্যায় মিরপুর-১ এলাকার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বুুধবার ওই শিক্ষাবিদের আত্মীয়রা আইইডিসিআরে গিয়ে রোগীর করোনা পরীক্ষার জন্য তদবির করেন। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে ফোন করিয়ে অবশেষে করোনা পরীক্ষায় রাজি করাতে সফল হন তারা। আইইডিসিআরের এক কর্মী মিরপুরের ওই হাসপাতালে গিয়ে রোগীর রক্ত নিয়ে আসেন। সে রক্ত পরীক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকালে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয় ওই শিক্ষাবিদ করোনায় আক্রান্ত। বিষয়টি জানতে পেরে বেসরকারি হাসপাতালটি থেকে ওই সময়ই রোগীকে সরিয়ে নিতে চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকার থেকে হাসপাতালটিতে রোগীকে আইসিইউতে রাখতে বাধ্য করা হয়। এ অবস্থার মধ্যেই শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় এ শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তার মরদেহ রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় তার পরিবারের কয়েক সদস্য জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনায় আক্রান্ত এ শিক্ষাবিদকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন তার সন্তানরা। পিতার মৃত্যুর পর এখন তার দুই ছেলে, এক মেয়ে, নিকটাত্মীয়সহ অন্তত ১০ জন করোনার ঝুঁকিতে আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মৃত ওই শিক্ষাবিদ বসবাস করতেন রাজধানীর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগে নিজ বাড়িতে। তার পরিবার কিংবা ওই বাড়িতে বসবাসকারী কোনো সদস্য সম্প্রতি বিদেশ সফর করেননি বলে নিশ্চিত হয়েছে বণিক বার্তা। ঠিক কোত্থেকে বা কার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে, সে বিষয়েও অজ্ঞাত পরিবারের বাকি সদস্যরা। এ বিষয়ে মৃত শিক্ষাবিদের পরিবারের সদস্যদের গণমাধ্যমে কথা বলতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে কল্যাণপুর ও মিরপুরের ওই দুটি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। করোনা আক্রান্ত ওই রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সংশ্লিষ্টদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত দেশে সরকারের পক্ষ থেকে একমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করছে আইইডিসিআর। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষাধিক প্রবাসী দেশে এসেছেন। এদের অনেকেই এসেছেন সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে। এখন পর্যন্ত ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানিয়েছে সরকার। আইইডিসিআর ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে সরকার করোনার নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি। আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা পরীক্ষার সমন্বয় করার জন্যই এ পরীক্ষার অনুমতি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে এখনই দিতে চায় না তারা। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য উন্নত মানের বায়োসেফটি ল্যাবের প্রয়োজন পড়ায় এ সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছে সরকার। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার লক্ষণ আছে, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে যত বেশি সম্ভব পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে দ্রুত রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশনে নেয়া যায়। নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেয়া সম্ভব হলে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম শক্তিশালী করা যাবে বলে মনে করে ডব্লিউএইচও। ![]() বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া উদ্বেগজনক , সংকট মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত ? |