শিরোনাম: |
ভাত-কাপড় পাবার ও আদায় করে নেবার অধিকার মানুষের থাকা চাই-বঙ্গবন্ধু
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
|
![]() জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ভাত-কাপড় পাবার ও আদায় করে নেবার অধিকার মানুষের থাকবে, সাথে সাথে নিজের মতবাদ প্রচার করার অধিকারও মানুষের থাকা চাই। তা না হলে মানুষের জীবন বোধ হয় পাথরের মতো শুষ্ক হয়ে যায়। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির শেষ অংশে তিনি এই মন্তব্য করেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু মূলত চীন বিপ্লবের পর সে দেশের কমিউনিস্ট সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। চীন বিপ্লবের বছর তিনেকের মাথায় সে দেশের একটি বৈশ্বিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বইয়ে নানাভাবে তুলে ধরেছেন সে সময়কার তরুণ রাজনীতিক শেখ মুজিবুর রহমান। এ ছাড়া চীনের বিপ্লবের পরে সে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরেন। মাও সে তুংয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন শেখ মুজিব। তবে কমিউনিস্ট পার্টি যে নয়া গণতন্ত্র সেখানে চালু করেছে তা ভালো লাগেনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি বইটির ১১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, দুনিয়ায় আজ অনেক আদর্শের সরকার আছে। কোথাও রাজতন্ত্র, কোথাও গণতন্ত্র, কোথাও ফ্যাসিবাদ, কোথাও কম্যুনিজম বা সোশ্যালিজম। যে যে দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার আর কম্যুনিস্ট সরকার কায়েম, সেখানে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক আদর্শকে কাজ করতে দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, আবার অনেক দেশ গণতন্ত্র বলে চিৎকার করে, কিন্তু গণতন্ত্রের ‘গ’ অক্ষরও কায়েম হতে দেয় না সে দেশের সরকার। কারণ বিরোধীদল থাকলে তাদের অপকর্ম দুনিয়ার কাছে ধরা পড়ে এবং জনগণের চাপে গদি ছাড়তে বাধ্য হয়। তাই তারা ছলে-বলে কৌশলে গদি রক্ষার জন্য নানা উপায় বাহির করে। এবং বিরোধীদলের নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে। বইটির ১১৮ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, নয়াচীনের উন্নতি দেখে সত্যিই আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। যদি দশ বৎসর তারা দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে গড়তে পারে তবে দেশের জনসাধারণের কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না, অশিক্ষা কুসংস্কার মুছে যাবে। এবং দুনিয়ার যে কোনো শক্তির সাথে তারা মোকাবিলা করতে পারবে সকল দিক থেকে, কারণ জাতিকে গড়ে তোলার যে প্রধান শক্তি জনসাধারণের মনোবল তা নয়াচীনের জনগণের মধ্যে আছে। নয়াচীনে অনেক কিছুই আমার ভালো লেগেছিল এ কথা সত্য। কিন্তু নয়াচীন সরকার কম্যুনিস্ট মতবাদ ছাড়া অন্য কোনো মতবাদের লোককে রাজনীতি করতে দেয় না। একমাত্র নয়াচীন নেতা মাও সে তুয়ের নয়া গণতন্ত্র’র নীতি যারা বিশ্বাস করেন তাদেরই রাজনীতি করার অধিকার আছে। অন্য কোনো আদর্শের দল সৃষ্টি করার অধিকার কারো নেই। যদি নয়াচীন সরকারের বড় পদগুালাতে কম্যুনিস্ট ছাড়া দু’চারজন নন কম্যুনিস্ট আছেন, তবে ধরে নিতে হবে তারা কম্যুনিস্ট-ভাবাপন্ন এবং কম্যুনিস্টরা যা বলে তাই বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়। ধরুন, একজন সাধারণ নাগরিক মনে করে সরকার যেভাবে দেশকে গড়তে চেষ্টা করছে তাহাতেই দেশের মঙ্গল। শেখ মুজিবুর রহমান আরো লিখেন, নয়াচীনে যার সাথেই আলাপ করেছি, দেখেছি তারা আমেরিকার কথা শুনলে যেন রাগে ফেটে পড়ে। অনেক কথার ও আলোচনার এবং অনেকগুলো কারণের মধ্যে, এর তিনটা কারণই প্রধান বলে মনে হলো। নয়াচীনকে ইউএন-এ ঢুকতে দিচ্ছে না (অবশ্য এখন চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য); কোরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়ে আমেরিকা কোরিয়ানদের যুদ্ধে হত্যা করেছে। চীনে জীবাণু বোমা ফেলেছে, চিয়াং কাইশেককে সাহায্য করেছে। চিয়াং কাইশেক যে আজ ফরমোজাতে বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে আরামে বাস করছে, তা একমাত্র আমেরিকার সাহায্যে। |