মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩ ৭ চৈত্র ১৪২৯
শিরোনাম: রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করুন : বাংলাদেশ ন্যাপ       বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে হার্ভার্ডে গোলটেবিল আলোচনা        সড়ক দুর্ঘটনা: প্রাণহানিতে রাষ্ট্র নির্বিকার ..........আ স ম রব        জগন্নাথ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তিতে থাকছে       দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে সৈয়দপরে : মির্জা ফখরুল        বঙ্গবন্ধু হত্যার বৈধতা দিয়েছিল বিএনপি: শ ম রেজাউল করিম       ইবিতে 'বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে জানো' শীর্ষক কুইজ প্রতিযোগিতা       
মুক্তিযুদ্ধের নতুন দিগন্ত রংপুর বিভাগের পাঁচ বই -আজহারুল আজাদ জুয়েল-
বিজয় কাব্য: উলিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের রণাঙ্গণের স্মৃতিচারণ :
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
প্রকাশ: শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০, ১:৫২ পিএম আপডেট: ২২.০৮.২০২০ ২:১৯ পিএম |

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি কম হতো। মুক্তিযুদ্ধকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টাও ছিল সেই সময়। এখন সময় বদলেছে। মুক্তিযুদ্ধ ইস্যু এখন প্রায় সব মানুষের আলোচনার বিষয়। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখলেখিও প্রচুর। একটা সময়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতীয় ভিত্তিক লেখালেখি বেশি হতো। এখন সেটাও বদলেছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের আ লিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর লেখা ও গবেষণা হচ্ছে। আ লিক ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে বিপুল সংখ্যক বই। 


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ অ ল হলো রংপুর বিভাগ। এই বিভাগে মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বীরত্বগাঁথা রয়েছে তেমনি আছে গণহত্যার কঠিণ নির্মমতা। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ও গণহত্যা নিয়ে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপরে প্রকাশিত হয়েছে ৫টি বই। বইগুলো যারা লিখেছেন তারা সবাই দিনাজপুরের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রণয়ন ও গবেষণায় এই বইগুলো নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। তাই দিনাজপুরের মানুষ হিসেবে সেইসব বই নিয়ে আমার এই নিবন্ধ ;

বিজয় কাব্য: উলিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের রণাঙ্গণের স্মৃতিচারণ : 

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এ দেশের মানুষের উপর হামলা ও নির্যাতন দেখে পাকিস্তানি হানাদারদের উচিৎ শিক্ষা দেয়ার নিমিত্তে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। রৌমারী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগ দিয়ে ট্রেনিং শেষে কোম্পানী কমান্ডার খায়রুল আলমের নেতৃত্বে ১৪০ থেকে ১৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘুঘুমারীর বেলালউদ্দিনের বাসায় অস্থায়ী ক্যাম্প বসাই। ক্যাম্পে ২-৩ সপ্তাহ অবস্থানকালে লোকজনের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করি। দরিদ্র হওয়া সত্বেও এলাকার লোক আমাদের জন্য গমের গুড়া ও সিদ্ধ আলু খাইতে দেন। এরপর আমরা ব্রম্মপুত্র নদী পার হয়ে উলিপুরের আঠারো পাইকা মৌজার ভবেশ চন্দ্র সিংহের বাড়িতে ক্যাম্প করি। আমরা মালতীবাড়ী রেলওয়ের দুইটি ব্রিজ উড়িয়ে দেই, যতীনের হাট ও দূর্গাপুরে রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন চালাই। আরো পরে প্লাটুন কমান্ডার চান মিয়ার নেতৃত্বে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে একাধিক অপারেশন চালাই। এর ৩-৪ দিন পর দেশ স্বাধীন হলে গাইবান্ধার মিলিশিয়া ক্যাম্প কমান্ডার রহমত মিয়ার নিকট অস্ত্র জমা দেই।”


এভাবেই কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ মধুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ তার মুক্তিযুদ্ধকালের ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ করেছেন। সেই সময় ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি। তার মত করে ৩৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ নিয়ে চলতি ২০২০ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সম্পুর্ণ নতুন এক বই “বিজয় কাব্য: উলিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের রণাঙ্গণের স্মৃতিচারণ।” 


বইটি প্রকাশিত হয়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। এটি সম্পাদনা করেছেন সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ যিনি উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের সহকারি ভূমি কমিশনার। তার বাড়ি দিনাজপুরে এবং সেই সূত্রে বইয়ের একটি কপি আমার হাতে এসেছে। ৬৬২ পৃষ্ঠার মোটা বইটির পাতায় পাতায় মুক্তিযোদ্ধাগণ তুলে ধরেছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধে যাবার প্রেক্ষাপট, যুদ্ধকালীন ঘটনা সমূহ, তাদের কারণে পরিবারের লোকেরা যে অসহ্য নির্যাতন ও কষ্ট ভোগ করেছিলেন, রয়েছে সেই সবের বর্ণনা। 


বইটি নি:সন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় ও গবেষণায় অসাধারণ এক দলিল হিসেবে কাজ করবে, কারণ তৃণমূলের মুক্তিযোদ্ধাগণ যারা সবাই উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তারা নিজেরা সেই স্মৃতিচারণগুলো লিখেছেন। আর সেগুলোই সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেছেন এবং বই আকারে প্রকাশ করে দিয়েছেন উলিপুর উপজেলা প্রশাসন। 


উপজেলা প্রশাসন কেন এমন একটি উদ্যোগ নিতে গেল? এর জবাব রয়েছে বইটির সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয়তে সহকারি ভূমি কমিশনার স্টিভ লিখেছেন, “একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার (হুমায়ুন কবীর) কাছ থেকে ছোট থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী শুনে শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তেমনভাবে প্রকাশ পায়নি।” অনেকের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভোঁতা হয়ে গেছে। আর তাই এই রকম একটি আয়োজন করেছেন তিনি যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটে। বইটির শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুদ্রিত হয়েছে। বাণী রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের এর।


 উলিপুর উপজেলা, উলিপুর পৌরসভা ও মুিক্তযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের মানচিত্র আছে বইটিতে। এরপর রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাগণের ছবিসহ তাদের স্মৃতিচারণ। এতগুলো মুক্তিযোদ্ধার ছবি ও স্মৃতিচারণ সংগ্রহ করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করে মুজিব বর্ষে জাতিকে দারুন এক উপহার দিয়েছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা স্টিভ। বইটির বিভিন্ন পাতায় মুক্তিযুদ্ধকালের বেশ কিছু দূর্লভ ছবিও ছাপানো হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মো. তারেক ইকবাল ও সোহেলী আনার কবীর। মুদ্রণ করেছে পুস্পিতা, উলিপুর। গ্রন্থসত্ব রয়েছে উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের। বইটির প্রথম ১৬ পৃষ্ঠা গ্লোসী পেপারে রঙ্গিণ মুদ্রণ। পৃষ্ঠা নম্বর শুরু হয়েছে এরপর থেকে। পৃষ্ঠা নম্বর ১ হতে ৬৪৫ পর্যন্ত অফসেট কাগজে ছাপানো। মূল্য ৫০০ টাকা। যারা মুক্তিযুদ্ধের শেকড় বুঝতে চান তাদের জানার ও বোঝার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বইটি অবদান রাখবে।






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com