শিরোনাম: |
মুক্তিযুদ্ধের নতুন দিগন্ত রংপুর বিভাগের পাঁচ বই
-আজহারুল আজাদ জুয়েল-
গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ লালমনিরহাট জেলা :
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
|
গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ লালমনিরহাট জেলা : মুক্তিযুেদ্ধর সময় রেলওয়ের জেলা হিসেবে খ্যাত ছিল লালমনিরহাট। তখন এখানে বিহারিদের আধিপত্য বেশি ছিল। রেলের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ তাদের দখলে ছিল। সরকারি চাকুরীজীবী হওয়ার সুবাদে তাদের সুযোগ-সুবিধাও বেশি ছিল। তারা বাঙালিদের অনেকটা হেয় চোখে দেখত, বাঙালি মুসলমানদের মুসলমান মনে করতো না এবং নেতিবাচক অর্থে বাঙালি না বলে “বাঙাল” বলত। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এই জেলা শহরে প্রথম গণহত্যা শুরু হয় বিহারিদের দ্বারা। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তাদের হাতে শাজাহান নামের একজন যুবক এবং চা দোকানে কর্মরত একজন কিশোর হত্যার শিকার হয়। এরপর বাঙালিদের প্রতিরোধের মুখে বিহারিরা নিজেদেরকে সাময়িক গুটিয়ে নেয় বটে, কিন্তু ৩ এপ্রিল বিকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লালমনিরহাট শহরে প্রবেশ করার পর ৪ এপ্রিল হতে বিহারিরা হানাদারদের সহযোগিতায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিদের সম্মিলিত আক্রমণে প্রথম দুদিনেই কয়েক হাজার বাঙালির মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টানসহ সব ধর্মের বাঙালিদেরই নৃশংস এবং অবিশ^াস্য নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়। সেই গণহত্যায় নারী-পুরষ, বয়সী-অল্প বয়সী, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, শিশু, এমনকি কোলের বাচ্চারাও প্রাণহানির হাত থেকে রেহাই পায় নাই। ধারালো অস্ত্রে এক-দেড় বছরের বাচ্চাদের গলা কেটে রেলওয়ের জ¦লন্ত বয়লারে নিক্ষেপ করা হতো। লালমনিরহাট জেলার সেই নারকীয়, বিভৎস্য গণহত্যার তথ্যগুলো জরিপ আকারে তুলে আনেন দিনাজপুরের সাংবাদিক ও গবেষক আজহারুল আজাদ জুয়েল। তার গবেষণা অনুযায়ী লালমনিরহাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫৬২টি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফল “গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ লালমনিরহাট জেলা” শিরোনামে বই আকারে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। এই গ্রন্থটিও সম্পাদনা করেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও রাজশাহী আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা ড. মাহবুবর রহমান। ১৫৪ পৃষ্ঠার অফসেট মুদ্রণে বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। বইটি প্রকাশ করেছে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট, খুলনা। মুদ্রণে সুবর্ণ, ঢাকা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ও গবেষণায় অসাধারণ এক দলিল হতে পারে এই বই। |