শিরোনাম: |
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেমিনার
![]() |
![]() আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেমিনার বক্তারা ভাষাবিদ দীনেশ চন্দ্র সেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “মুসলমান সম্রাটগণ বর্তমান বঙ্গ-সাহিত্যের জন্মদাতা বললে অত্যুক্তি হয় না। বঙ্গ-সাহিত্য মুসলমানদেরই সৃষ্ট, বঙ্গ-ভাষা বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা।” বক্তারা অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যদি বাংলায় মুসলিম বিজয় ত্বরান্বিত না হতো এবং এদেশে আরো কয়েক শতকের জন্য পূ্র্বের শাসন অব্যাহত থাকতো, তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত এবং অবহেলিত ও বিস্মৃত-প্রায় হয়ে অতীতের গর্ভে নিমজ্জিত হতো। বক্তারা আরো বলেন, মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার যে সাহিত্য চর্চা শুরু হয়, তার মাধ্যমে বাংলা ভাষা একটি পরিপূর্ণ ভাষা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জন করে।বক্তারা বলেন, মধ্যযুগে মুসলিম শাসন আমলে বাংলা ভাষার দ্বার উন্মুক্তকরণ ও স্বাধীন চর্চা শুরু হওয়ার পরও একটি দল ১২০০ থেকে ১৩৫০ সনকে বাংলা ভাষা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলে দাবী করে বাংলা ভাষার সাথে মুসলমানদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। অথচ এ সময় রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষা পরিস্ফুটনের সুযোগ পায়। বক্তারা তাই ১২০০ থেকে ১৩৫০ সনকে বাংলার সাহিত্যের অন্ধকার যুগ না বলে বাংলা ভাষার পরিস্ফুটনের সময়কাল হিসেবে আখ্যায়িত করার দাবী জানান। বক্তারা আরো বলেন, বাংলা ভাষাকে কলুষিত করার চেষ্টা পরবর্তীতে যুগে যুগে আরো হয়। ১৮শ’ সনে ব্রিটিশরা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলা ভাষার আরবী ও ফারসী শব্দ বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ প্রবেশের উদ্দেশ্যে সাহিত্য চর্চা শুরু করে। তারা দেখাতে চায়, “বাংলা ভাষার সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই”।বক্তারা বলেন, মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রচার করা হয়, বাংলা ভাষায় প্রথম কুরআন শরীফ অনুবাদ নাকি গিরিশ চন্দ্র সেন করেছে। অথচ ১৮৮৬ সালে গিরিশ চন্দ্র সেনের অনুবাদের বহু পূর্বে ১৮০৮ সালে বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের আংশিক অনুবাদ করেন মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া। এরপর ১৮৩৬ সনে মৌলভী নাঈমুদ্দীন পূর্ণাঙ্গ কুরআন মাজীদের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন। অথচ এ ইতিহাস প্রচার করা হয় না।বক্তারা বলেন, আধুনিককালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা উঠলে প্রথম নাম আসে ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের নাম। সংগঠনটি সর্বপ্রথম ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলে। তাদের দেখানো পথেই পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন তৈরী হয়, ঘটে ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী। ![]() আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সেমিনার বক্তারা বলেন, মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের রচনাসমূহ ছিলো নৈতিকতা ও শিক্ষনীয় ঘটনা সমৃদ্ধ, অপরদিকে অমুসলিমদের অধিকাংশ রচনায় নারী-পুরুষের প্রণয় ও জৈবিক ঘটনাবলী প্রাধান্য পায়। মুসলিম সাহিত্যিকদের সাহিত্য আড়াল করে অন্যদেরটা চর্চা করার প্রভাব সমাজে পড়ে। বর্তমান সময়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি বলতে নারী-পুরুষের প্রণয়সহ জৈবিক ঘটনাবলী বেশি প্রাধান্য পায়। বক্তারা আরো বলেন, অমুসলিম সাহিত্যিকদের সাহিত্য আমাদের পর্যাপ্ত নৈতিকতা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তৈরী হয়েছে এক ধরনের শূন্যস্থান। আর সেই শূন্যস্থান দিয়েই প্রবেশ করেছে পশ্চিমা শিল্প-সংস্কৃতির প্রভাব, সৃষ্টি হয়েছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসণ। বক্তারা বলেন, বর্তমান নতুন প্রজন্ম বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি রেখে পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ বাঙ্গালী মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের নৈতিকতা সমৃদ্ধ সাহিত্য চর্চাকে লুকিয়ে রাখা। বক্তারা বলেন, মুসলিম সাহিত্যিকদের পুরাতন সাহিত্যগুলো যদি পুনরুদ্ধার ও প্রচার করা সম্ভব হয়, তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা চর্চা অনেকটাই ফিরিয়ে আনা সম্ভব।সেমিনারের উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফের ভাষা গবেষণা বিভাগের আহবায়ক মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, সদস্য মুহম্মদ আরিফুর রহমান, মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম, মুহম্মদ নিজামুদ্দিন ও মুহম্মদ মুহম্মদ নাইমুল ইসলাম। |