বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম: সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ করল উইনসাম স্মাইল ফাউন্ডেশন       অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে, মোকাবেলায় বাড়ছে না বরাদ্দ       ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ৩৩তম মিলিয়নিয়ার হলেন রাজশাহীর মাদ্রাসা শিক্ষক আমিনুল       জাপানের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড সনি’র জেনুইন পণ্য এখন চট্টগ্রামে       এয়ার টিকিট ফ্রি পাওয়ার সুযোগ       ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১১৭৩২       দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ      
১৬ বছরেও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে পারেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
প্রকাশ: বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১, ১১:১১ এএম |

হাঁটি হাঁটি, পা পা করে প্রতিষ্ঠার ১৬ তম বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। পুরান ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে অবস্থিত দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ। ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালীন সরকার জগন্নাথ কলেজ থেকে জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে। ছোট্ট পরিসরের এই ক্যাম্পাস ঢাকা শহরে অবস্থান হওয়ার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পছন্দ এই বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাসের পাতায় যেমনভাবে জগন্নাথ কলেজের অর্জনগুলো লেখা আছে ঠিক গত ১৫ বছরেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী অর্জন সমূহ লেখা রয়েছে। দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বিসিএস, এসআই, ব্যাংক বা কর্পোরোট হাউজে বরাবরই এসব প্রতিযোগিতা মূলক চাকুরির বাজারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দক্ষতার সাথে তারা জানান দিচ্ছে সমানভাবে। পড়াশোনার পাশাপাশি, রাজনীতি, খেলাধূলা, তথ্য প্রযুক্তি ও গবেষণা খাত সহ নতুন উদ্যোক্তা হয়ে সফলতা অর্জনেও সবদিকে সমান পারদর্শী জবি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৫ সালে। যদিও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ১৩ টি হল ছিল, যা কলেজ আমল থেকে দখলকৃত। প্রতিষ্ঠার হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা বারবার হল আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নেমে আসলেও যার কোনো সমাধান হয়নি। হল আন্দোলনের মুখে পড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ক্যাম্পাস তৈরির ঘোষণা দেয় কেরানীগঞ্জে ২০১১ সালে। যেখানে থাকবে হল সুবিধা সহ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সুযোগ - সুবিধা। প্রধানমন্ত্রীর নতুন ক্যাম্পাসের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বন্ধ করে সেই সময়। 


অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাময়িক অসুবিধার কথা চিন্তা করে ও রাজপথে হল আন্দোলনের মুখে পড়ে মেয়েদের জন্য একমাত্র 'শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব' হল নির্মানের কাজ শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয় মেয়েদের জন্য একমাত্র আবাসিক হলের কাজ শেষে গত বছরের ১৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান উদ্বোধন করে যায়। তারপর হলের কিছু সংস্থাপন কাজ রয়ে যায় যা করোনা কালীন ক্যাম্পাস বন্ধ হলে আর করা যায়নি। এই বছরের জুলাই নাগাদ শেষ হয় হলের পূর্নাঙ্গ কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক হলের কাজ শুরু করে ২০১১ সালের জানুয়ারি যা ২০১৩ জুন অবধি সময় ছিলো। পুনরায় ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বেড়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যায়। এইভাবে মেয়াদ বাড়তে বাড়তে এক হলের কাজ শেষ হতে সময় লাগে দীর্ঘ ১০ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময় নেয়। কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা জোর দাবি জানিয়ে আসছে দ্রুত হল চালু করার জন্য। সর্বশেষ হলের অগ্রগতি হচ্ছে অনলাইন প্রাথমিক আবেদন শেষ করেছে গত ১৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হল নেই, মাঠ নেই, কোনো জিমনেসিয়াম বা ব্যায়ামাগার নেই। আমরা কিছুদিন পর শুনবো ক্যাম্পাসের জায়গা সহ বাকি সম্পদও নেই। এটা তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসাবে আমাদের যে মৌলিক অধিকার থাকা উচিত, তা থেকে আজ বঞ্চিত আমরা। একটা মাঠ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আর কত আন্দোলন-সংগ্রাম ও মানববন্ধন করবে। প্রশাসন সচেতন না হলেও আমরা আর কত আন্দোলন করবো অধিকার আদায়ের জন্য। ১০ তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ কাদের বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে নানান সমস্যায় ছিলাম ঠিক আছে কিন্তু নবীন শিক্ষার্থীরাও যদি একই সমস্যা নিয়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে হয় তাহলে প্রশাসনের উচিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ - আলোচনা করা কিভাবে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা যায়। 
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন চাকুরীর জন্য পড়াশোনা করবো অথচ প্রশাসনের হীনমন্যতার জন্য রোজ রোজ মানববন্ধন, সভা- সমাবেশ, করতে হয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার জন্য নানামুখী কর্মকান্ড করছে আমাদের প্রশাসন ঠিক তার উল্টো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য ব্যয় না করে ফেরত দেয় সেটা আসলে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটা চাওয়া সকল শিক্ষার্থীদের চাওয়া- পাওয়া গুলোকে প্রাধান্য দিবে জবি প্রশাসন। 


১২ তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান রকি বলেন, পুরান ঢাকার অবস্থা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে না। আমরা কিভাবে মেসে এবং বাসা ভাড়া নিয়ে ভাড়া থাকি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়  আবাসন সংকট থাকে কিন্তু এতো তীব্রতর হয়না। নতুন ক্যাম্পাসের কথা তো চিন্তা করা যায় না। দেশে আরও বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদেরও সমস্যা আছে কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মতো কোনো প্রশাসন নেই যেমনি ঠিক এতো সমস্যাও নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৬ বছরেও কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক সমস্যায় থাকে এটা এখন প্রশ্নের বিষয়। ১৩ তম ব্যাচের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে এমন সমস্যা হবে কখনো কল্পনা করতে পারিনি। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে রীতিমতো আমাদের পথচারী ও যানবাহনের সাথে যুদ্ধ করে ঢুকতে হয় ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো এসব নিয়ে চিন্তা করে না কারণ তাদের সকলের বড় বড় গাড়ি আছে এজন্য কোনো সমস্যা হয়না। 


আমরা ছেলেরা তো যেভাবে হোক ক্যাম্পাসে ঠেলাঠেলি করে ঢুকতে পারি তবে একটা মেয়ে কিভাবে ক্যাম্পাসে এসব বাধা অতিক্রম করে যায় এখন হয়তো ভাবার সময় এসেছে আমাদের। ১৬ বছর পার হতে চলছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু এই ব্যস্ততম রাস্তায় একটা ফুটওভার ব্রিজ আজও হয়নি। ১৪ তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তিশা আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে অনেক স্বপ্ন চাপা পড়েছে। একজন মেয়ে আমি, আমি জানি পরিবার কতটা দুশ্চিন্তায় থাকে প্রতিনিয়ত আমাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে না। একটা হল হবে, হচ্ছে, চালু করছে, উদ্বোধন শেষ এই করতে করতে আজ ১০ বছর পার হয়েছে। এখনো হলে উঠা হয়নি আমাদের। পুরান ঢাকার সমস্যা প্রকট আকার নিবে নতুন ব্যাচ আসলে ক্যাম্পাসে। আবাসিক সমস্যা কতটা ভয়াবহ হবে প্রশাসন একবার চিন্তাও করেনি হয়তো। ১৫ তম ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, আমরা মহামারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো নবীন বরন পাইনি, কোনো ধরনের অনুষ্ঠান পাইনি ক্যাম্পাসে সবকিছু থেকে আমরা বঞ্চিত আজ। আমাদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা যখন ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে তাদের কতকিছু দিয়ে প্রশাসন স্বাগত জানাচ্ছে আর আমরা শুধু চেয়ে দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন হয়নি গতবারে মানলাম কিন্তু এবার প্রশাসন চাইলে সীমিত পরিসরে আয়োজন করতে পারতো। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে আমরা জানি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারে। কিন্তু কেন জানি তাদের কোনো ভূমিকা নেই এসব সমস্যা নিয়ে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে খুবই আগ্রহী অথচ প্রশাসন আর নতুন করে রুম সংখ্যা বাড়াচ্ছে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা ইদানীং সময়ে সকল প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় ভালো করছে এটা সবাই জানে কিন্তু আরও ভালো করার জন্য নতুন উদ্যোগ কেউ নিচ্ছে না। তাছাড়াও শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাত্র মসজিদ রয়েছে আমাদের। নিয়মিত লাইব্রেরি আসা ছেলে - মেয়েরা নামাজ পড়ে এখানে  কিন্তু জায়গা স্বল্পতার জন্য অনেক সময় অনেকে নামাজ পড়তে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষার্থী ও কর্মচারী মিলে প্রায় ১৮০০০ হাজার সংখ্যক মানুষের জন্য এই মসজিদ নির্ধারিত। কলেজ আমল থেকে এই মসজিদ এখানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো খবরই নেই এটার সংস্করণ ও বর্ধিতকরণ নিয়ে। আসলে ১৬ তম বছরে এসে এতো সমস্যা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবে হতে পারে না শিক্ষার্থীরা বলেন। 


এই বিষয়ে জবির দায়িত্বরত উপাচার্য অধ্যাপক ড.  ইমদাদুল হক বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সমূহ জানি এবং তাদের কথাগুলো সত্যি। আসলে আমরা চাইলেও রাতারাতি কোনোকিছু পরিবর্তন করতে পারছি না। এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা এতো সংগ্রাম করার পর যে সফলতা বয়ে আনছে তা আমাদের ভালো লাগে। হলের বিষয়ে শীগ্রই নোটিশ আসবে, এটা নিয়ে এতো অভিযোগ করা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, মাঠ নিয়ে আমরা এখনো কথা বলছি সংশ্লিষ্ট সকলকের সাথে। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাবো আমরা। হল নেই কিন্তু তাদের নতুন ক্যাম্পাসের কাজ আমরা শুরু করেছি। আসলে পুরান ঢাকার মতো একটা গন্ডিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করেছে তৎকালীন সরকার কিন্তু কোনো চিন্তা করেনি কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। আমরা আশা করছি নতুন করে শিক্ষার্থীদের চাহিদা গুলো নিয়ে ভালোভাবে কাজ করবো ইনশাল্লাহ। 






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com