শিরোনাম: |
শৈলকুপার জৈব সার যাচ্ছে জেলার বাইরে, কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএনও'র কারখানা পরিদর্শন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
|
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়ে উঠা জৈব সার কারখানা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন ও ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা। বুধবার বিকেলে উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামে হারুন অরগ্যানিক এগ্রো ফার্ম নামের জৈব সার কারখানা পরিশর্দনে যান তারা। পরিদর্শন শেষে কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ব্যবহারে কৃষক যখন হাঁপিয়ে উঠছেন, আর সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় খাচ্ছেন বিষযুক্ত খাবার, ঠিক সে সময় হারুন অরগ্যানিক এর্গো ফার্ম জৈবসার তৈরি ও তা প্রয়োগ করে নিরাপদ ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষকদের। উপজেলার গন্ডি ছাড়িয়ে শৈলকুপার জৈবসার এখন যাচ্ছে জেলার বাইরেও। তিনি আরো জানান, জমিতে ক্রমাগত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে জমিতে জৈব উপাদানের ঘাটটি রোধের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া, নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ি জৈবসার প্রয়োগ করা গেলে কৃষককের সারের খরচ একবারেই কমে যাবে, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তণ ঘটবে। এছাড়া, বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন তিনি। শৈলকুপার প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ রঘুনন্দনপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গড়ে উঠেছে কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট আর ট্রাইকোকেম্পাস্ট তৈরির কারখানা। সীমিত পরিসরে হলেও তারা জৈবসার তৈরি করে কমদামে বিক্রি করছেন স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। ওসব জৈবসার তৈরির ওই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে জেলার বাইরেও। আর তাই প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় যাচ্ছে এই সার। রঘুনন্দনপুর গ্রামের কৃষক রুস্তম আলি জানালেন, তিনি পেঁয়াজ, বেগুন আর রোপা আমনের ক্ষেতে তার এলাকায় তৈরি জৈবসার ব্যবহার করে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন। প্রথমে বেশ সংশয়ের মধ্যে থাকলেও তিনি খুশি হয়েছেন সারের কার্যকারিতা দেখে। একই এলাকার আরেক কৃষক এবং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম জানালেন, তার এলাকার হারুন অর্গানিক এগ্রো ফার্মের জৈবসার কৌতুহলবশত ব্যবহার করে তিনি আস্থা পেয়েছেন। ওই দুই কৃষকের মতে, রাসায়নিক সারের তূলনায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ টাকা খরচ করেই ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, যা তাদের সার বাবদ ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ খরচ কমিয়ে দেবে। আর উৎপাদন খরচ কমলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা লাভবান হবেন।বাগুটিয়া বাজারের সার ব্যবসায়ি আসাদ বিশ্বাস জানালেন, পরীক্ষামূলক তিনি জৈবসার বিক্রির ডিলারশিপ নিয়েছেন। গত এক বছরে ওই সারের চাহিদা বেড়েছে। আশেপাশের গ্রাম থেকেও কৃষকরা সারের বায়না দিচ্ছেন। হারুন অরগ্যানিক এগ্রো ফার্মের তরুণ কর্ণধার মনিরুজ্জামান সজিব জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে প্রয়োগের জন্য তিনি জৈবসার উৎপাদনের কথা ভাবতেন। এব্যাপারে বড় পরিসরে চিন্তা করলে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিস তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়। তাদের সহযোগিতায় তিনি বাড়ির নিকটবর্তী শৈলকুপা-হাটফাজিলপুর সড়কের উত্তর দিকে একটি প্রকল্প হাতে নেন। তার কারখানায় নিয়মিত শ্রমিকসহ ৯-১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন কেঁচোকম্পোস্ট ও ট্রাইকোকম্পোস্ট উৎপাদনে। কেঁচোকম্পোস্ট উৎপাদনে গোবর মূল উপাদান হলেও ট্রাইকোকম্পোস্ট উৎপাদনে ১৫টির মত উৎপাদন প্রয়োজন, যা গোবর ছাড়াও চিনিকলের গাদ, ছাই, গবাদিপশুর হাড়ের গুড়ো, শামুক-ঝিনুক গুড়ো, কলাগাছ, চিনিকলের উচ্ছিষ্ট ছোবড়া ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। প্রতিমাসে ৩শ টনের মত সার তার কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। তবে কোন প্রকার ক্যামিকেলের ব্যবহার নেই। কিন্তু জৈব সার বাজারজাতের ক্ষেত্রে যদি ছাড়পত্র প্রদানে সরকার সহজিকরণ করতো, তাহলে এ প্রকল্পের আরো উদ্যোক্তা তৈরি হত। এতে করে কারখানা মালিকরা লাভবান হত, কৃষকরাও উপকৃত হত।
|