শিরোনাম: |
রুখতেই হবে রাষ্ট্রবিরোধী দুষ্টু চক্রকে।। হাসিবুর রহমান মানিক ।।
|
সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই সম্প্রতি দেশবাসীকে দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার সম্পর্কে সতর্কতার আহ্বান বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের বিরোধীতা করতে গিয়ে একটি চক্র আদাজল খেয়ে নেমেছে রাষ্ট্রবিরোধীতায়। সরকার আর রাষ্ট্রের তফাৎ মানতে নারাজ এরা। সরকারের উন্নয়ণ, একে একে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে এরা রাষ্ট্রবিরোধী নানা অপতৎপরতায় লীপ্ত। বিভিন্ন দেশে বসে এরা বাংলাদেশের যাবতীয় সর্বনাশের আয়োজনে মত্ত।
নিজেরা নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগে গোটা দেশকেই ভোগানোর চক্করে ফেলে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের নোংরা লিপ্সায় নামা চক্রটিকে রোখা সময়ের দাবি। রাজনৈতিক বিরোধে নেমে এরা অর্থনীতি-কূটনীতির সর্বনাশ করে নিচ্ছে বিকৃত সুখানুভূতি। মানুষের জীবন রক্ষাকারী করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নিয়ে মিথ্যাচার ছড়াতেও এদের বিবেকে বাধছে না। চরম এই দুঃসময়েও দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। সরকার থেকে দেয়া হয়েছে নগদ প্রণোদনাসহ ত্রাণ সহায়তা। অচল শিল্পকারখানাগুলোও সচল রাখা হয়েছে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা দিয়ে। সীমাবদ্ধতা ও সামর্থের অকুলানের মধ্যেও দফায়-দফায় করোনার ঢেউ মোকাবেলার চেষ্টা করছে সরকার। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কেবল দেশে নয়, বিশ্বেও তা বিস্ময়কর সাফল্য হিসেবে প্রশংসিত। এ সাফল্যের উদ্বৃতিতে সরকারের সঙ্গে এসে যায় বাংলাদেশের নামও। দেশের এ সুনাম সইতে বড় কষ্ট তাদের। বিদেশি মিডিয়ার সরনাপন্ন হয়ে এরা রটাচ্ছে দুর্নাম। সরকারকে কলঙ্কিত করতে গিয়ে লেপ্টে ফেলছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকেই। সম্প্রতি এরা আরো বেপরোয়া। বিভিন্ন মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু প্রতিবেদন সেই অপচেষ্টারই প্রতিফলন। কিছু ভুল ও অসত্য তথ্য কাটপেস্ট করে যে ধরনের প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক আহ্বানের রহস্য এখানেই। প্রধানমন্ত্রী রহস্য ভেঙে না বললেও সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি অনেকাংশে খোলা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, ‘বিদেশি মিডিয়ার স্লট ভাড়া করে একটি চিহ্নিত চক্র দেশবিরোধী অপপ্রচার করছে। এরা কারা- এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। তার ভাষায়- ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তারাই এর হোতা। বঙ্গবন্ধুর গড়া বাংলাদেশেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এগুলো করা হচ্ছে। দেশের অব্যাহত অগ্রগতি রোখাই এদের মূল অ্যাজেন্ডা। এ ঘৃণ্য কর্মে তারা কতোটা সফল হবে সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে, তারা দমছে না। এগিয়েই চলছে। ভয়টা সেখানেই। আবার অভয়ের আশাও রয়েছে। বিশ্বব্যাংক এক সময় বড় একটি দেশের সহায়তা নিয়ে এদেশে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেটি ভেস্তে গেছে। সামনেও ভেস্তে যাওয়ার আশা করাই যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার রুখতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি। এটির সাফল্য কামনা করতেই হয়। সেইসঙ্গে মনে রাখা দরকার ধরনে মনে হচ্ছে এবারের কামড়টি মরণ কামড়। চক্রটি হিসাব করে দেখেছে, ভালো খবরের চেয়ে মন্দ খবরে মানুষের আগ্রহ বেশি। ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচকের প্রতি টান। গুজবেও আনন্দ আছে। এটি বিকৃত আনন্দ। এদের অপপ্রচার সাম্প্রতিক সময়ে আগের রেকর্ড ভেংএ এগুচ্ছে। প্রযুক্তিকে যতো নোংরাভাবে কাজে লাগানো যায়, তার সবই করছে তারা। ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব। ম্যাসেঞ্জার, ইনবক্সে মিথ্যে, বানোয়াট ভিডিও ক্লিপ শেয়ার হচ্ছে সমানে। এক হাত থেকে অন্য হাতে ঘুরছে এগুলো। দেশে এবং দেশের বাইরে স্যুট হওয়া এসব কনটেন্টসের পেছনে এক বিশাল চক্র। নানান দেশের, নানান জায়গার ছবি এনে এডিট-প্যানেলে ভয়েজওভার দিয়ে মিলিয়ে দেওয়া নির্যাতন, হত্যা, খুন, ধর্ষণের মিথ্য খবর অনেককে শিউরে তুলছে। বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা অভিযুক্ত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন তথাকথিত সাংবাদিক এবং বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তার ব্যাপক কন্ট্রিবিউশন এসবের পেছনে। এ সাইবার অপরাধীরা যে কালসাপের মতো বাংলাদেশের স্বার্থকে চরমভাবে বিনষ্ট করছে তা কারো চোখে আঙুল দিয়ে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। তা মনিটরে দূতাবাসগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। যদিও এঁদের বিচারের আওতায় আনার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, এঁদের দেশে এনে বিচারে দেওয়া; কিন্তু এ কথা সবাই জানেন যে কোনো আসামি একবার দেশ থেকে পালাতে পারলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা একটু কঠিন। তারপরও সরকার চাইলে এরা অধরা থাকবে বা পার পেয়ে যাবে, তা মনে করা যায় না। পদক্ষেপ নিতে হবে ভেবেচিন্তে শক্ত হাতে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিদেশে বসে দেশবিরোধী অপপ্রচার ও অপতৎপরতার অনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছে সরকার। বরাবরের মতো বলা হয়েছে, বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে। কার্যকর অ্যাকশন বা পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল হুমকি-হুঁশিয়ারি উপকারের বদলে অপকার ডেকে আনতে পারে। এ নিষ্ঠুর বাস্তবতা সামনে রেখে এগুতে হবে সরকারকে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কি না তা সাধারণ মানুষের অজানা। আবার জানতেই হবে-এমনও কথা নয়। দেশগুলোতে বাংলাদেশের দূতাবাস বা কন্স্যুলেট অফিস কী পদক্ষেপ নিয়েছে- এ বিষয়ে জানতে উৎসুক অনেকে। বিদেশে থাকা কোনো কোনো বাংলাদেশির কিন্তু হোস্ট কান্ট্রির নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট রয়েছে, তাও মাথায় রাখতে হবে। যাদের পাসপোর্টই নেই তারা রাষ্ট্রহীন, রিফিউজি। তাদের জন্য সারা দুনিয়াই খোলা । যে কোন দেশের নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ নিয়ে এরা যেন আরো দানব হয়ে উঠতে না পারে এ ব্যাপারে পদক্ষেপের গুরু দায়িত্ব নিতেই হবে দূতাবাস ও কন্স্যুলেট অফিসগুলোকে। বাংলাদেশের অর্জন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশবাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ - যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।বাংলাদেশ ২০২২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ |