শিরোনাম: |
শ্রীবরদীতে কাল বৈশাখী ঝড়ে বোরো ফসল ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি
|
শেরপুরের শ্রীবরদীতে কাল বৈশাখী শিলাঝড়ে বোরো ফসল, সবজি ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে সহস্রাধিক কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়েছে। ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোররাতে প্রায় আধঘন্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার পৌরসভা, তাতিহাটী, গোশাইপুর, কুড়িকাহনিয়া, কাকিলাকুড়া, রাণীশিমুলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বোরো ফসল ও সবজি ক্ষেতের সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। গত কয়েকদিনে গরম বাতাসে হঠাৎ ধানে চিটা হওয়া শুরু করে। এটা নিয়েই প্রান্তিক কৃষক হতাশায় ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতিতে দিশেহারা হয়েছেন কৃষক। সরেজমিনে উপজেলার মাটিয়াকুড়া, জঙ্গলখিলা, বাদে ঘোনাপাড়া, ধাতুয়া, জালকাটা, ষাইটকাকড়া, দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া, কুরুয়া, কুড়িকাহনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আকস্মিক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, পাট, শসা, ডাটা, কলাবাগান, কুমড়া সহ বিভিন্ন সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে ঘরবাড়ি, ছিদ্র হয়েছে বসত ঘরে টিনের চাল। জালকাটা গ্রামের আলম মিয়া বলেন, আমি ধার দেনা করে প্রায় দুই একর ধান ও ৫০ শতাংশ জমিতে শসা করে ছিলাম, আমার ধান এবং শসা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও আমার ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই গ্রামের আলা উদ্দিন বলেন, আমার ধান, শসাসহ সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আমার বসত ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকবো? কি করব বুঝতে পারছি না। মাটিয়াকুড়া গ্রামের লিয়াকত হোসেন, শাহীন, করিম,জামাল, ওয়াজকুরুনী,কুদ্দিস, শফিউল, দেলোয়ার, মাহমুদুল জানান, আজ (মঙ্গলবার) ভোররাতে শিলা বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে।একই গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, আমার ধান প্রায় পাকা অবস্থায় ছিল। হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান মাটিতে মিশে গেছে। জঙ্গলখিলা গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী সীমা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা খুবই কষ্ট করে এক একর জমি চাষ করেছিলাম। হঠাৎ শিলা বৃষ্টি আমাদের সম্পূর্ণ ধানের ক্ষেত নষ্ট করেছে। বুঝতে পারছি না। একই গ্রামের তাসলিম বলেন, আমাদের ঘর বাড়ি ঝড়ে ভেঙ্গে তছনছ হয়েছে। ৪০ শতাংশ জমি বর্গা চাষ করেছিলাম, শিলা বৃষ্টি সব শেষ করে দিছে। এখন থাকার ঘরও নেই। এদিকে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমানউপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হুমায়ুন দিলদার বলেন, হঠাৎ ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে উপজেলায় বোরো ২৫১৪ হেক্টর জমির ধান ও ২৭৯ হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য আবাদ ১২৬ হেক্টর সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে এবং বারো ১৬৭৬ হেক্টর ধান, সবজি ৩১ হেক্টর ও অন্যান্য আবাদ ৫৪ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে প্রনোদনা এবং পূর্ণবাসন কার্যক্রমে এ সব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় ফসল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করা হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেছি। কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। |