শিরোনাম: |
পদ্মা সেতু, অতি কথন ও করণীয়
|
যাইহোক, ব্যক্তির থেকেও যখন রাষ্ট্রের বয়স কম তখন ম্যাচুউরিটির কিছুটা হেরফের হতে পারে। প্রসঙ্গ যখন পদ্মা সেতু তাহলে উদ্বোধন দিয়েই শুরু করি। কারণ পদ্মা সেতু নিয়ে আমার সীমিত ধারণা নিয়ে যাই বলি না কেন কম হয়ে যেতে পারে। তবে এ কথা বলতে পারি আমি আমার জীবনে এর আগে রাষ্ট্রের তথা সরকারের এত বড় অর্জন দেখিনি। ঘটনাঃ ১ মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও জ্ঞানী ব্যক্তি। সার্ভিসের সকল ক্ষেত্রেই তার অবদান প্রতীয়মান। বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার সামনে তার উপস্থিতি ও বক্তব্যই বলে দেয় তার প্রজ্ঞা ও প্রতিপত্তির পরিমাপ। উদ্বোধনী দিনে তার বক্তৃতা ও বক্তৃতার বিষয়বস্তু তার দৃঢ়তাকে প্রমাণ করে। তার চোখের পানি অনেক কেই করেছে আবেগী। কিন্তু উদ্বোধন এর আগে আগে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের সামনে তিনি যখন উদ্বোধনী বেধিতে নানা বিষয়বস্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মাইকে বোঝাচ্ছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি আবার বলেছেন, “স্যার সেটা আপনিই দেখে দিসেন স্যার।” তাহলে প্রশ্ন হলে এটা মাইকে বলার কি আছে ? উদ্বোধনী বেধির বিষয়বস্তু খালি গলায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানো যেত। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত কিছুর খবর রাখেন আর উদ্বোধনী বেধিতে কি হবে সেটা তার নলেজে কি ছিল না ? অবশ্যই ছিল। এই সেতুর প্রতিটির কনার সাথেই তার পরিচয় আছে। কারণ এই সেতু তার সিদ্ধান্তেরই ফসল। আমলা বা অর্থনীতিবিধদের মতামত নিলে তা কখনোই বাস্তাবে রূপ নিত না। কাজেই এ ধরণের একটি ঘটনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্ণতার পথে বাধাঁ। ঘটনাঃ ২ উদ্বোধনের আগে আমরা দেখলাম নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশ কড়াকড়ি। এমনকি কিছু কাজও অসম্পূর্ণ রাখা হলো নিরাপত্তা ইস্যুতে। বিভিন্ন বাহিনীর ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তিবর্গ গরমকে উপেক্ষো করেও মিডিয়ার সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিশদ বর্ণনা করছিলেন। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখলাম একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি নারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বভাব সূলভভাবে তার সাথে ইঙ্গিতে কথাও বলেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর উদারতা। আর আপনারা যারা মিডিয়ার সামনে কথা বলেন তাদের দৈন্যতা। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে যা বলা হয় তা কি সুভঙ্করের ফাকিঁ ? পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজিব গান্ধির ক্ষেত্রেও এ ধরণে একটি ঘটনা ঘটেছিল। খালি রিটারমেন্ট এর পরে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, নাকি কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হবেন তা নিয়ে বিভোর থাকলে হবে ? ঘটনাঃ ৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই উৎসুক জনতা বাদর ঝোলা দিয়ে কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই পদব্রজে সেতু পরাপারের যে ব্যর্থ চেষ্টা করল তাও মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ববাসী দেখেছে। নিয়ম ভাঙ্গাই যেন আমাদের নিয়মে পরিনত হয়েছে। যেহেতু ১০ লক্ষ লোক জড়ো করার একটি বিশাল মাইল ফলক অর্জন করা এতো সহজ বিষয় ছিল না। এই অসাধ্য সাধনের জন্য সাধুবাদ দেওয়া যেতেই পারে। এটা বড় ধরণের একটি রাজনৈতিক সফলতা ও বটে। অনুষ্ঠানে আগত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা কর্মীদের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থিত। তাহলে কারা নিয়ম ভাঙ্গার চেষ্টা করল, এতে এ ধরণের অর্জন কি ম্লান হয় না ? তাহলে কি আমাদের কর্মীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই ? ঘটনাঃ ৪ উদ্বোধনের পরের দিন, নাট-বল্টু খোলা, মূত্র বিসর্জন, মটর সাইকেল রেস, ফটো সেশন, যানজট, মানবজট, প্রাণহানী, টোল আদায়ে ধীরগতি ইত্যাদি ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল কেন ? জাতি হিসেবে আমাদের বৈশিষ্ট সমূহ কি আমাদের অজানা ছিল ? নাকি আমাদের চিন্তার পরিধির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার পর পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে আমরা যে ধরণের পদক্ষেপ নিলাম তা আগে নিলে এ ধরণে অপ্রীতিকর ঘটনা কি এড়ানো যেত না ? আমরা যত কথা বলি তার অর্ধেক হলেও যেন কাজ করার চেষ্টা করি, আর না হয় নিরব থাকাই শ্রেয়। |