বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২ আশ্বিন ১৪৩০
শিরোনাম: উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির       জিটি২ প্রো ব্যবহারহারীদের জন্য রিয়েলমি নিয়ে এলো অ্যান্ড্রয়েড ১৪ ভিত্তিক রিয়েলমি ইউআই ৫.০ আর্লি অ্যাক্সেস       অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব এর সাথে আইসিএসবি-এর প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎ       ১৯ তম এশিয়ান গেমস, দাবা ইভেন্ট       উত্পাদনশীলতা বাড়াতে ২ হাজার জলবায়ু-প্রভাবিত চাষীদের সাহায্য করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সিএনআরএস       স্মার্টফোন রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখল স্যামসাং       মার্কিন প্রতিনিধিদল নির্বাচন বিষয়ে জানতে বাংলাদেশে আসছে       
‘চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী’
প্রকাশ: রোববার, ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১০:৪৮ এএম |

শৈশবে গ্রামে দেখেছি সিঁধেল চুরি আর গরু চুরির হিড়িক। আজ রাতে এই বাড়িতে সিঁধ কেটেছে তো কাল ওই বাড়ির। আজ এই বাড়ির গোয়াল ফাঁকা হয়েছে তো কাল ওই বাড়ির। তবে গরু চুরির বিষয়ে ভিন্নতর একটা দৃশ্যও আমাদের চোখে পড়তো। তা হচ্ছে, গৃহস্থ জেনে যেতেন তার চুরি হওয়া গরুটি কোথায় এবং কার কাছে আছে।

কারণ চোর গরু চুরি করে নিয়ে তার বাড়িতে গরু রাখতো না। রাখতো তার নিজস্ব এবং বিশ্বস্ত কারও বাড়ি। কোনো সূত্রে গরু চোর গৃহস্থকে জানিয়ে দিতো তোমার গরু কাল এই সময় পর্যন্ত এমুকের বাড়িতে থাকবে। গৃহস্থ দৌড়াতো ওই বাড়ি এবং গরুগুলোর জন্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতো। চোরের হাত থেকে যে ব্যক্তি এই গরুগুলো রাখতো তাকে বলা হতো ‘থাইব্বলদার’।

 বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি একযোগে কাজ করে তাহলে তথ্য জানা অসম্ভব কিছু থাকবে না। যেহেতু সুইস ব্যাংকেরই বিধান আছে অপরাধ তদন্তের প্রয়োজনে তারা গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে পারে, আর সেই সুযোগটি যদি বাংলাদেশ গ্রহণ করে তবে বাংলাদেশের অপরাধীদের চিহ্নিত করা অসম্ভব কিছু নয়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজকাল এই ‘থাইব্বলদারদের’ আর দেখা পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, গ্রামবাংলার থাইব্বলদাররা এখন উন্নত দেশে স্থানান্তর হয়েছে। আর গরু চোররা রয়ে গেছে বাংলাদেশে। এই থাইব্বলদার হচ্ছে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের কিছু ব্যাংক। তবে বাংলাদেশের অর্থচোরদের লেবাস যে গরুচোরদের মতো নয় সেটা তো সহজেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের ওই লোকগুলো তাদের অবৈধ আয়ের টাকা এখন মালয়েশিয়া কিংবা সুইস ব্যাংকে জমা রাখছে। জমাকৃত অর্থ থেকে অর্জিত মুনাফা বাংলাদেশের আমানতকারীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশে যখন ডলার সংকট চলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে, বাংলাদেশ যখন তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ঠিক তখন হাজার হাজার কোটি টাকা সেই থাইব্বলদারদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশকে অচল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তবে ‘চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী’ বলে একটা কথা আছে। বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে। প্রতি বছরই অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকার পরিমাণ শুধু বাড়ছেই। যতই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হোক না কেন, যতই সংশোধনের আহ্বান জানানো হোক না কেন টাকা পাচার বন্ধ হচ্ছে না। পাচারকারীদের কানে যেন তুলো দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমে সংবাদ হচ্ছে, এবছর আগের বছরের তুলনায় অত কোটি টাকা বেশি পাচার হয়েছে। ওই যে গরুচোররা থেকে যেতো অন্ধকারে, হাল আমলের টাকা চোরেরাও থেকে যায় অন্ধকারে। ‘থাইব্বলদার’ আবার আইনগতভাবে নিজেদের ‘থাইব্বলদারি’ বাণিজ্য ঠিকই করে যেতে পারছে। মাঝখান থেকে সম্পদ হারাচ্ছে গৃহস্থ অর্থাৎ এখনকার বাংলাদেশ। ভাবা যায়! বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকেই জমা আছে ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, এই পাচারকৃত অর্থ আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মনে করার কারণ নেই, ওই সময় শুধু এই ৩ হাজার কোটি টাকাই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এখানে শুধু সুইস ব্যাংকের তথ্যই জানা গেছে। কিন্তু এশিয়ার একাধিক দেশেও এভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা যাচ্ছে। আর সেই ‘থাইব্বলদারদের’ নামও জানতে পারছে না বাংলাদেশের মানুষ।

আচ্ছা বাংলাদেশের অতীতের সেই গরুচোরদের নাম কি কোনোভাবেই জানা যেতো না? নাম কিন্তু কোনো না কোনোভাবে জানা হয়েই যেতো। তাহলে আধুনিক সুযোগ হাতে থাকার পরও বাংলাদেশ কোন কারণে টাকা পাচারকারীদের নাম জানতে পারছে না। কিংবা কোন কোন সূত্র থেকে সুইস ব্যাংকের ওই টাকাগুলো গেছে তা বের করাও কি এতটাই কঠিন বিষয়? বাংলাদেশ থেকে এই টাকাগুলো জমার সূত্র হিসেবে-বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনরা বলেন, বিদেশে অবস্থানকারীরা এই টাকা সরিয়েছে। আবার কখনো বলা হয়, এই টাকা আন্ডার ইনভয়েস কিংবা ওভার ইনভয়েস মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়েছে।

বিদেশে অবস্থানকারী বাঙালি কারও কাছ থেকে এই টাকা গেছে, এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য। তাহলে বাকি থাকে হুন্ডি মাধ্যমে পাচার হওয়ার বিষয়টি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় অধিকাংশ টাকাই হুন্ডি মাধ্যমে পাচার হয়ে গেছে। এই হুন্ডি ব্যবসার খবর সবাই জানে। কিন্তু তাদের টিকিটিও ধরার কোনো ক্ষমতা কি বাংলাদেশের নেই?

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের বিষয়টি অনেকেই আলোচনা করেন। হয়তো তাদের ব্যর্থতার মাত্রাটাও একটিু বেশিই। তা নাহলে তারা সেগুলো ধরতে পারছে না কেন। এদিকে সরকার টাকা ফেরত আনার একটি বড় অপসন এবারও খোলা রেখেছে। চলতি বাজেটে এসব পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এখনও শুনতে পারিনি যে, কী পরিমাণ টাকা বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। কিংবা আদৌ সেই টাকা বাংলাদেশে ফেরত আসবে কি না।

এমন পরিস্থিতিতে ১১ আগস্ট দেশের উচ্চ আদালত সরকারকে বলেছেন, সুইস ব্যাংকে অবৈধপথে বাংলাদেশিরা যেসব অর্থ জমা রেখেছেন বা পাচার করেছেন সেসব বিষয়ে সরকার এবং দুদক কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানতে চেয়েছেন। সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আদালত। হয়তো সরকার আদালতের কাছে তাদের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা প্রদান করবে।

আমরাও তেমন কিছু দেখার পর এটা কি বলতে পারবো, জমা হওয়া টাকার পরিমাণ অনেক কম। কিংবা পাচার হওয়া টাকাগুলো ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়েছে কি? অবশ্য এই প্রশ্নের জবাব ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড জানিয়েছেন এসব টাকা কীভাবে জমা হয়েছে, কারা জমা করেছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়নি এই পর্যন্ত।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হতে পারে, সুইজারল্যান্ডের সংবিধান এবং ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকের হিসাবধারীদের তথ্য প্রকাশ করার বিধান নেই। কিন্তু সেটাও কি ধোপে টেকার মতো? কারণ সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য, সেই অপরাধ সুইজারল্যান্ডই হোক আর অন্য কোনো দেশেই হোক।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি একযোগে কাজ করে তাহলে তথ্য জানা অসম্ভব কিছু থাকবে না। যেহেতু সুইস ব্যাংকেরই বিধান আছে অপরাধ তদন্তের প্রয়োজনে তারা গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে পারে, আর সেই সুযোগটি যদি বাংলাদেশ গ্রহণ করে তবে বাংলাদেশের অপরাধীদের চিহ্নিত করা অসম্ভব কিছু নয়।

অবৈধ অর্থ জমা দেওয়ার ব্যাংক হিসেবে সুইস ব্যাংকের খ্যাতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থপাচারকারীরা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি অন্য দেশের ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। তাই এই মুহূর্তে যদি বিষয়টি সম্পর্কে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেই পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে এই টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও সরকার গ্রহণ করতে পারে। অবৈধভাবে পাচার হওয়া আরাফাত রহমান কোকোর টাকা বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছে। সুতরাং বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি অচিন্তনীয় এমন ভাবার কারণ নেই। সেই উদ্যোগটি যদি সুইস ব্যাংকে জমা হওয়া টাকার ক্ষেত্রেও গ্রহণ করা হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতি কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :71sang[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com