শিরোনাম: |
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কটি হারাতে বসেছে ঐতিহ্য
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কটি হারাতে বসেছে ঐতিহ্য
মিলন হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
|
![]() পার্কটি যেন তার চিরচেনা রূপটি হারাতে বসেছে একটি 'ফুড ভ্যানের' জন্য। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে স্বাভাবিক ভাবে মানুষ কোলাহল মুক্ত আলো-বাতাস পছন্দ করে। তবে এখানকার সাধারণ মানুষের একমাত্র বাহাদুর শাহ পার্কে বরাদ্দ করা উন্মুক্ত স্থানটির ভিতরে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি স্থায়ী ‘ফুড ভ্যান’। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পার্কের একবারে মাঝ বরাবর জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে একটি স্থায়ী খাবারের দোকান (ফুড ভ্যান)। এ ফুড ভ্যানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) একজন ব্যক্তিকে ইজারা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঐতিহাসিক এ পার্কে লোহার বেষ্টনী বসিয়ে খাবারের দোকান। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বাণিজ্যিকভাবে খাবারের দোকান নির্মাণকাজ শুরু করায় ক্ষোভপ্রকাশ করে একাধিকবার মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন এ ফুড ভ্যানের বিপক্ষে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ভিক্টোরিয়া পার্কটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের নিকট। এ পার্কের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো ইতিহাস - ঐতিহ্য পুরান ঢাকাবাসীর। পুরান ঢাকার গিঞ্জি পরিবেশে এইটুকু জায়গায় যদি একটি খাবারের দোকান বসায় তাহলে পার্কটি তার পুরোনো গৌরব হারিয়ে ফেলবে। পার্কে আসা অতিথি পাখিগুলো কিংবা এত সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ সমূহ একটা সময় হারিয়ে যাবে। ![]() স্থানীয় এলাকাবাসী আরও জানান, বর্তমান সিটি করপোরেশনের টাকার কোনো অভাব নেই অথচ তারা পার্কে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে প্রাকৃতিক পরিবেশটা ধ্বংস করে দিতে চাই। আমরা কোনোভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিবো না। ডিএসসিসিকে বলবো এ ফুড ভ্যানের নির্মান কাজটি বন্ধ করে পার্কের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখুন। পুরান ঢাকার গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতারা বলেন, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত বাহাদুর শাহ পার্ক ইজারা দিয়ে পার্কটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। যেসব প্রকল্প স্থানীয় বাসিন্দারা চান না, সেসব প্রকল্প নিয়ে সিটি করপোরেশনের আগ্রহ বেশি। ডিএসসিসি ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম বলেন, অনেক টাকা খরচ করে পার্কটি সাবেক মেয়রের (সাঈদ খোকন) সময়ে আধুনিকায়ন করা হলেও এটি অনেকটা অনিরাপদ হয়ে গেছে। তাই ফুড ভ্যান করার জন্য যাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে তারা পার্কটি পরিচ্ছন্ন রাখবে। নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকবে। তখন ডেন্ডিখোরদের হাত থেকেও পার্কটি নিরাপদ রাখবে। সেলিম আরও বলেন, ইজারাদাররা পার্কটিকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলেছে। নিজেদের দশজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে সবসময় সুন্দর রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আরও লাইটিং থাকবে। এরপর যদি দেখা যায় আসলে তারা পার্কের ক্ষতি করছে তখন সরিয়ে দেওয়া হবে। এতে সমস্যার কিছু নেই। ![]() এই বাহাদুর শাহ পার্কের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস। এটার সাথে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর এর স্মৃতি। যার জন্য এখানে আর কোন প্রকারের স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। আগামী প্রজন্মের জন্য যারা রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্কের শহীদ মিনার। পুরান ঢাকায় উন্মুক্ত স্থান না থাকায় ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ এই পার্কে সকাল-বিকেল হাঁটাহাঁটি করেন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের বয়স ৫০ এর ওপরে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এ পার্কে এসে গ্রুপ স্টাডি ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান। |