কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা তোমাদের একজনকে তোমাদের এ মুদ্রাসহ বাজারে পাঠাও’ এখানে মুদ্রা শব্দের আরবি ‘ওয়ারাক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা কাগুজে নোট, গাছের পাতা কিংবা লিখিত দলিল বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়
পৃথিবীতে মানুষের পদচারণ শুরুর দিন থেকেই অর্থ ও মুদ্রার অস্তিত্ব ছিল। গবাদি পশু থেকে শুরু করে স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা, কাগুজে মুদ্রা, প্লাস্টিক মুদ্রা (ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড) হয়ে বিটকয়েনের (ডিজিটাল মুদ্রা) পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে মুদ্রা ব্যবস্থা।
কাগুজে মুদ্রার বা নোটের প্রচলন শুরু হয় চীনে, ট্যাঙের রাজত্বকালে (৬১৮-৯০৭ সাল)। ট্যাঙের রাজত্বকালে বাণিজ্যিক প্রসারের ফলে ধাতব মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছিল।
ধাতব মুদ্রা অর্থাৎ সোনার ও রুপার মুদ্রা যথেষ্ট দামি এবং নৌপথে জলদস্যুর আক্রমণের প্রবল সম্ভাবনা থাকায় সেগুলো নিয়ে ভ্রমণ করা ছিল রীতিমতো ঝুঁকির কাজ। তাই ধাতব মুদ্রার বিনিময়ে তারা সমমূল্যের কাগজের অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করতে শুরু করল। এতে যেমন স্বর্ণমুদ্রাগুলো রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকত, তেমনি জনগণের জন্য এটি হয়ে উঠেছিল আর্থিক লেনদেনের একটি নিরাপদ ব্যবস্থা।
ফলে এই ব্যবস্থাপনাটি তৎকালীন যুগে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছিল। ট্যাঙের রাজত্বের শেষের দিকে বণিকরা দলে দলে তাদের সব স্বর্ণ-রৌপ্য মুদ্রা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে লাগল। পৃথিবীর ইতিহাসেই এই সময়টাকে আমরা ব্যাংক নোট বা কাগুজে মুদ্রার উদ্ভাবনের যুগ হিসেবে জানি, যা ধাতব মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু পবিত্র কোরআন পড়লে বোঝা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগেও এরকম মুদ্রা ছিল। যা ধাতব মুদ্রা কিংবা শস্য, কড়ি জাতীয় কিছু ছিল না; বরং কাগুজে নোটের মতোই একটি মুদ্রা ছিল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এভাবেই আমি তাদের জাগিয়ে দিলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বলল, তোমরা কত সময় অবস্থান করেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা অবস্থান করেছি এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ। অপর কেউ বলল, তোমরা কত সময় অবস্থান করেছ তা তোমাদের রবই ভালো জানেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের একজনকে তোমাদের এ মুদ্রাসহ বাজারে পাঠাও। সে যেন দেখে কোন খাদ্য উত্তম তারপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য। আর সে যেন বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করে। আর কিছুতেই যেন তোমাদের সম্পর্কে কাউকেও কিছু জানতে না দেয়। (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ১৯)
উল্লিখিত আয়াতে পবিত্র কোরআনে ‘সুতরাং তোমরা তোমাদের একজনকে তোমাদের এ মুদ্রাসহ বাজারে পাঠাও’ অংশে মুদ্রা শব্দটির আরবি ‘ওয়ারাক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা আরবি ভাষায় কাগুজে নোট, গাছের পাতা কিংবা লিখিত দলিল বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। অতএব পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, আসহাবে কাহাফের আমলেও পৃথিবীতে এমন কোনো মুদ্রা ছিল, যা বর্তমান যুগের কাগুজে নোটের মতো কিছু একটা। এবং তারা সেই মুদ্রা নিয়ে বাজারে গিয়ে বুঝতে পারেন যে তাদের কাছে থাকা মুদ্রার নোট অকার্যকর হয়ে গেছে। কারণ তারা মহান আল্লাহর হুকুমে তিন শ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন।
মূলকথা হলো, এই আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে আধুনিক যুগের ব্যাংক নোটের মতো কোনো মুদ্রা এর আগেও পৃথিবীতে ছিল। তবে তার ধরন কেমন ছিল এর কোনো বিবরণ তাফসিরের কিতাবে পাওয়া যায় না। যেহেতু আসহাবে কাহফ কোন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তা নিয়েও বিতর্ক আছে, তাই তাদের কাছে মুদ্রার ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।