এবারের উৎসব ঘিরে দেশ-বিদেশের নির্মাতাদের বড় একটি অংশ ছিল নারীরা। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে নিজেদের নির্মিত সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩’ অংশগ্রহণ করেন। তাই এবারের উৎসব ঘিরে নারীদের সিনেমা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। ৯ দিনব্যাপী এই উৎসবের পর্দা নামছে আজ। ৯ দিনব্যাপী চলতে থাকা একবিংশতম উৎসবটি শুরু হয় গত শনিবার। এবারের উৎসবের স্লোগান ছিল ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’। ১০টি বিভাগে এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭১টি দেশের মোট ২৫২টি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। যার মধ্যে নারী নির্মাতাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩’-এর উৎসবে উইমেন ফিল্মমেকার শাখায় মোট ২৩টি সিনেমা প্রদর্শিত হয়। যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইথিওপিয়া, ইতালি, গ্রিস, ইরান, ফিলিস্তিন, কাতার, সুদান, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুইজারল্যান্ড, তুর্কি ও বাংলাদেশের নারী নির্মাতাদের সিনেমা প্রদর্শিত হয়। নারীদের এমন অংশগ্রহণ উপস্থিত সবার নজর কাড়ে।এবারের উৎসবে নারী নির্মাতদের সিনেমার তালিকায় বেশ আলোচিত ছিল বেশ কয়েকটি সিনেমা ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যার মধ্যে পাঁচটি সিনেমা উৎসবের প্রথম দিন থেকেই ছিল আলোচনায়। পাঁচটি সিনেমার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।ডেউ
সিনেমার সময় পঁয়তাল্লিশ মিনিট। যেখানে নারীর জীবনের নানা প্রতিকূলতার গল্প তুলে ধরা হয়। যে তার নিজের মতো করে পৃথিবীটাকে দেখে থাকেন। কথা বলেন নারী স্বাধীনতা নিয়ে। এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের নারী নির্মাতা সুবর্ণা সেঁজুতি তুষি। যেখানে দেখানো হয়, নারীর সৌন্দর্য ও যৌবন তাকে সব সময় সহযোগিতা করে না, বরং মাঝেমধ্যে মেধা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। মূল ব্যাপার হলো, একটা সময় সৌন্দর্য, শরীর চলে যায়Ñ মেধাটাই থেকে যায়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুন্সীগঞ্জে হয় সিনেমার শুটিং। ৪৫ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য এই সিনেমার প্রধান পাঁচ নারী চরিত্রÑ শোভা, যুবা, বোধি, যুক্তি ও মেধা। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, সাহানা সুমি, মৌটুসী বিশ্বাস, শানারেই দেবী শানু, শর্মিমালা, আদ্রিতা স্বতী, দীপান্বিতা মার্টিন, মৌসুমি মালেক মম, সুতপা বড়ুয়াসহ আরও অনেকে।
হয়েন দ্য স্কাই ওয়াস ব্লু
এটি একটি অস্ট্রেলিয়ান স্বপ্লদৈর্ঘ্য সিনেমা। যেখানে একটি শিশুর জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। সিনেমাটি নির্মাণ ও গল্প লিখেছেন রে চই। প্রযোজনায় ছিলেন রে চই ও শ্রী রামেজ। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় এলিচে লি ক্রুগার, ইয়ু সুন, সারাহ ঝু, পাং পিং টিংসহ আরও অনেকে।
এবং ছাদ
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সিনেমার নির্মাণ ও গল্প নিয়ে কাজ করেন। এবারের ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩’ উৎসবে তার ‘এবং ছাদ’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। ১৮ মিনিটের ‘এবং ছাদ’ ছবিতে দেখা যায় সরোদের সুর আর ছাদে কাটানো বাঙালি জীবনের কিছু টুকরো জীবন। ছবিতে নতুন মুখের পাশাপাশি রয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রীতম দাস। এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা ও প্রযোজনা করার পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করছেন শ্রীলেখা মিত্র।
কন্টিনিউয়াস কাভারেজ
এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ প্যালেস্টাইনের একটি সিনেমা। নব্বই মিনিটের এই সিনেমার গল্পে দেখানো হয়েছে একজন বিদেশি সাংবাদিক যুদ্ধের ঘটনা তুলে আনতে গিয়ে কীভাবে ইসরায়েলের সৈন্যদের হাতে নিহত হন। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি লেখার পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন এমতেয়াজ আলমগারাবি। এই সিনেমার নির্দিষ্ট কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই।
লেইলা
মহামারি করোনাভাইরাসের সময়কার শিক্ষাজীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমা লাইলা। ১৪ মিনিটের টার্কি এই স্বল্পদৈর্ঘটি নির্মাণ করেছেন নুরসেন চেতিন কুরকেন। যেখানে দেখানো হয়েছে করোনার সেই ভয়াবহ সময় স্কুল ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাগ্রহণে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। শর্টফিল্মটির প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লেইলা ভাতানকরুর, সাদিয়ে ভাতানকরুর ও ইব্রাহীম ভাতানকরুর।
উৎসবের এশিয়ান কমপিটিশন শাখায় দেখানো হয় ২৩টি সিনেমা। এ ছাড়া ওয়াইল্ড অ্যাঙ্গেল শাখায় ১১, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড শাখায় ৪৫, বাংলাদেশ প্যানারোমা শাখায় ২৯, উইমেন ফিল্মমেকার শাখায় ২৩, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম শাখায় ১৪ ও চিলড্রেন ফিল্ম শাখায় ১৮টি সিনেমা দেখানো হয়।
এ ছাড়া শর্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট শাখায় ৮৪টি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি দেখানো হয় এবারে উৎসবে। রেট্রোস্পেকটিভ শাখায় ফ্রান্সের বিখ্যাত পরিচালক ফ্রঁসোয়া ক্রুফোর ‘দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ’সহ চারটি সিনেমা দেখানো হয়েছে।
৯ দিনব্যাপী উৎসবের ভেন্যু হিসেবে এবারও ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মূল ও সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও স্টার সিনেপ্লেক্স।
প্রতিদিন ৫টি ভেন্যুতে ১২৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ১২৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ছিল ৮১টি। উৎসবের আয়োজক রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। বরাবরের মত এবারের উৎসবে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, ট্রিবিউট, বাংলাদেশ প্যানারোমো, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে অংশগ্রহণকারী চলচ্চিত্রগুলো। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে উৎসবের পর্দা নামবে আজ।