শুক্রবার ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
শিরোনাম: মাত্র ৭১ দিনে পদ্মা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট স্কিম “বিজয় ৭১”       তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি শিল্পের পুঁজিবাজারে প্রবেশের পথ সুগম করতে বেসিস এবং প্রাইম ব্যাংকইনভেস্টমেন্টের চুক্তি স্বাক্ষর       কিস্তিতে মার্সেল ফ্রিজ কিনে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পেলেন নোয়াখালীর অটোমেকানিক আলাউদ্দিন       ক্রেনের আঘাতে ট্রেন লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ       নাদিহা আলীর মৃত্যতে বসুন্ধরা পরিবারের শোক       হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন লাউঞ্জে যমুনা ব্যাংক পিএলসি এর কর্মশালার আয়োজন       রেপো, লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধা এবং আইবিএলএফ নিলামের ফলাফল      
ইবিতে ওরিয়েন্টেশনের পর নবীন ছাত্রকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি
ইবি প্রতিনিধি:
প্রকাশ: সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮:৪৩ এএম |

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সদ্য ভর্তি হওয়া এক নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী তাহমিন ওসমান ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র। তারই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন সিনিয়র কর্তৃক র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ তার। গত ৯ সেপ্টেম্বর বাবাকে সাথে নিয়ে রেজিস্ট্রার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর ও বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্র।


অভিযোগ পাওয়ার পর রোববার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান ও ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মিঠুন বৈরাগী। 


ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর ২০২১-২২ সেশনের কিছু সিনিয়র ছাত্র ভুক্তভোগীকে র‍্যাগিং করেন এবং চরম খারাপ ব্যবহার করেন। এদিন ভুক্তভোগীকে দেড়টার দিকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের পর জিমনেশিয়ামের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় পরিচয় কীভাবে দিতে হয় তা শেখানো শুরু করে। অভিযুক্তরা তার হাত-পা সোজা রাখতে বলেন। কিন্তু ভুক্তভোগীর হাত একটু মুঠ করায় অভিযুক্তরা বলেন, ‘তোর কী আমাদেরকে থাপড়াইতে ইচ্ছে করছে তাই না? তোর খুব জিদ উঠছে তাই তো?’ এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী সরি বললে তারা পাল্টা বলেন, ‘সরি বলিস কেন? তুই কী ভুল করেছিস বল? আমাদেরকে ভয় করবি কেন? আমরা কী ভূত ? বল আমরা ভূত?’ 


সেইদিন পরিচয় গ্রহণ শেষে ভুক্তভোগীকে অভিযুক্ত শুভ বলেন, ‘ঠিক সন্ধ্যা ৭ টায় এই স্থানেই আসবি, না আসলে আলাদা রুমে ডেকে নিয়ে যাবো।’ ওইদিন ভুক্তভোগী সন্ধ্যায় হাজির হন এবং সিনিয়ররা তাকে সাদ্দাম হোসেন হলের বিপরীতে নিয়ে বসেন। এ সময় পূনরায় পরিচয় দিতে বললে সে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। এসময় ভুক্তভোগী সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিতে না পারার অভিযুক্ত মিজানুর ইমন তাকে বলেন, ‘তুই শুধু ওদের দিকে তাকিয়েই সালাম দিলি, আমাদের দিকে তাকালি না। এর মানে শুধু ওরাই তোদের বড়ভাই আর আমরা তো তোর.... (প্রকাশে অযোগ্য) ভাই।’


তখন আরেক অভিযুক্ত আকিব তাকে বলেন, ‘তুই তো আমাদের বড় ভাই তাই না? আমাদের সালাম দেওয়া লাগবে না।’ এমতাবস্থায় অভিযুক্তদের মধ্যে কোনো একজন চলে যাচ্ছিলেন যা ভুক্তভোগীর দৃষ্টিতে আসেনি। এসময় উপস্থিত অভিযুক্ত শুভ তাকে বলেন, ‘ওই দেখ তোর বড় ভাই চলে যাচ্ছে, তাকে সালাম দিলি না কেন? সে তো রাগ করেছে। এখন যা ওকে গিয়ে কনভিন্স কর যা। কীভাবে করবি তোর ব্যাপার।’ তখন ভুক্তভোগী তাদের এই কথা না শোনায় অভিযুক্ত মিজানুর ইমন তাকে বলেন, ‘তুই বলবি যে তুই একটা.....(প্রকাশে অযোগ্য)।’ সে অনুরুপ তাই করলো । এবার ওই অভিযুক্ত বলেন, ‘এমন ভাবে নিজেকে.... (প্রকাশে অযোগ্য) বল যেন তুই উল্লাস করছিস।’ সে তাই করলো। এবার আরেক অভিযুক্ত পুলক তাকে বলেন, ‘তুই বলবি যে তুই একটা.... (প্রকাশে অযোগ্য), অনুরূপভাবে ৩ বার বলবি।’ এগুলো করার পর অভিযুক্ত মিজানুর ইমন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোর কী....(প্রকাশে অযোগ্য) আছে?’ ভুক্তভোগী কোনো জবাব দেইনি। এবার ওই অভিযুক্ত বলেন, ‘....(প্রকাশে অযোগ্য) মানে কী বল।’ সে (ভুক্তভোগী) গাম্ভীর্য অবলম্বন করেন। এতে ওই অভিযুক্ত রেগে গিয়ে তাকে বলেন, ‘তুই কি মুখে.....(প্রকাশে অযোগ্য) ঠুসে রেখেছিস? কথা বলিস না কেন?.....(প্রকাশে অযোগ্য) মুখে ঠুসে রেখেছিস। তুই ১০ রকমের হাসি দিবি, নাম সহ। ভুক্তভোগী এরুপ করতে অসম্মতি জানাই। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখেন তারা।


ওইদিন দুপুরে তাকে যখন র‍্যাগ দেওয়া হচ্ছিল, তখন ক্যাম্পাসে মাইকিং হচ্ছিল, ‘র‍্যাগিং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে’। একথা শুনে সে হেসে দেওয়ায় অভিযুক্তরা তাকে বলেন, ‘আমাদেরকে হাস্যকর মনে হয় তোর? অনেক বন্ধুসূলভ আচরণ করে ফেলেছি তাই তো? তুই তো আমাদের বড় ভাই।’


অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টায় হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। ওইদিন ভুক্তভোগী যেতে দেরি করেন। খেলা শেষে অভিযুক্ত শুভ ও সাকিব তাকে জিমনেশিয়ামের সামনে নিয়ে যান এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘কেন দেরী করেছি।’ সে বলেন, ‘আমি ক্লান্ত ছিলাম।’ প্রত্যুত্তরে অভিযুক্ত শুভ বলেন, ‘আমরাও তো সকালে না খেয়ে খেলাধুলা করে তোকে নিয়ে বসলাম, আমাদের কী ক্লান্ত লাগে না? তোর আসতে এত অসুবিধা কেন? বেশ ভালো ব্যবহার করে ফেলেছি ? আমাদের সাথে আমাদের বড়ভাইরা যা করেছিলো, তোর ওপরও সেরকম করতে বাধ্য করিস না।’ ওইদিন ভুক্তভোগী মাগরিব-এর পর অভিযুক্তদের সাথে আর দেখা করেন নি।


গত ৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস শেষে ভুক্তভোগীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় জিমনেশিয়ামের পাশে। এসময় ভুক্তভোগী কেন অভিযুক্তদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেই নি এজন্য তাকে বকা দেওয়া হয়।


অভিযুক্তরা বলেন, ‘যদি আমাদের কথা না মানিস, তোকে ব্যাচ-আউট করে দেওয়া হবে। ব্যাচ-আউট কী বুঝিস? তুই এইচআরএম বিভাগের ছাত্র হিসেবে কোনো সুযোগ সুবিধা পাবি না। সবাই বলে বেড়াবে যে তুই ব্যাচ-আউট স্টুডেন্ট । আর আমাদের মধ্যে কাউকে চিনিস? আমাদের অনেকেই অনেক উঁচু পজিশনে আছে। তাদের ক্ষমতা জানিস?’ তারা এগারোটা হতে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে এসকল কথার মাধ্যমে হয়রানি করেন। এসময় ভুক্তভোগী মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘আমার দুপুর ৩ টায় ট্রেন আছে।’ এটা বলে কোনোরকম মুক্তি নিয়ে ফিরে আসেন ওই ভুক্তভোগী।


এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীর বাবা রেজিস্ট্রার বরাবর মেইল করে ছেলেকে র‌্যাগিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের কপি প্রক্টর অফিসে প্রেরণ করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।


এ বিষয়ে কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, চিঠিটা আমি এখনো পাইনি। রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জেনেছি। চিঠিটি হাতে পাওয়ার পর আগামীকাল থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।


প্রক্টর ও এন্টি র‍্যাগিং ভিজিলেন্স কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি ওই শিক্ষার্থীর বিভাগের সভাপতির নিকট পত্র প্রেরণ করেছি। যাতে করে তার ক্লাস-পরীক্ষায় সভাপতিসহ ওই বিভাগের শিক্ষকগণ তার দেখভাল করেন। সহকারী প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য খোঁজ খবর রাখতে নির্দেশনা দিয়েছি। ইবি থানার ওসিকে পত্র প্রেরণ করেছি যাতে তার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বাবা তার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য হলে একটি সিটের বিষয়ে বলেছিলো। ফলে আমরা হল প্রভোস্টকে পত্র প্রেরণ করেছি। হল প্রভোস্ট মিটিং করে আগামীকাল ওই ছেলেকে হলে তোলার কথা রয়েছে।


প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এতে গত ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া উচ্চ আদালত থেকে ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে মাইকিং করে র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে কেউ র‌্যাগিংয়ে জড়িত থাকলে কঠোর শাস্তি এমনকি ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়।






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :71sang[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com