শিরোনাম: |
কী পেলাম জি২০ থেকে : জয়ন্ত ঘোষাল
|
অবশেষজি২০ বিশ্ব সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। অধিবেশনের সমাপ্তিওঘোষণা হলো। এই সম্মেলনহওয়ার আগের যে দিল্লিদেখলাম, খুব কম আন্তর্জাতিকসম্মেলনে এহেন আঁটসাঁট নিরাপত্তাও এমন সাজ সাজরব দেখেছি। ভারতে এর আগে কোনোদিন জি২০ সম্মেলন হয়নি। এইপ্রথমবার অনুষ্ঠিত হলো জি২০ সম্মেলন।ন্যামের সম্মেলন হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর সময়। সেই সময়ফিদেল কাস্ত্রো থেকে শুরু করেঅনেক রাষ্ট্রনেতা ভারতে এসেছেন। কমনওয়েলথ গেমস নিয়েও দিল্লিতেকম হৈচৈ হয়নি। কীপেলাম জি২০ থেকেএবার একঅভূতপূর্ব পরিস্থিতি! কার্যত একটা রণক্ষেত্রের চেহারানিয়েছিল রাজধানী দিল্লি। বিমানবন্দর সিলড। চারদিকে দোকান-বাজার বন্ধ। বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত সিলড। দিল্লিসেজেছিল নানাভাবে। ছিল রামায়ণ-মহাভারতপুরাণের রঙিন ছবি প্রদর্শন।এসব তো গেল বহিরাঙ্গেরকথা। এখন এই অধিবেশনেরসমাপ্তির মূল প্রশ্নটা হলো, কী পেলাম জি২০ থেকে? প্রথমেএ কথা স্বীকার করেনেওয়া ভালো যে চীনেরপ্রেসিডেন্ট শি চিনপিং আররাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রতিনিধি পাঠালেও নিজেরা না আসায় জি২০সম্মেলনের যে হাইপ, সেটাকিঞ্চিৎ হলেও ম্লান হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেযিনি এসেছিলেন, তিনি ওয়াশিংটনের হোয়াইটহাউসের বাইডেনের ভারত-নীতির প্রধানস্থপতি ক্যাম্পবেল। হোয়াইটহাউসে বসেন। ভারতীয় নীতির প্রধান নির্ধারক তিনি। এই সফরে তিনিসব সময় বাইডেনের সঙ্গেইছিলেন। এমনকি বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সময়ও তিনি সেখানেউপস্থিত ছিলেন। বাইডেনেরসঙ্গে যে প্রতিনিধিদল এসেছিল, তাদের জন্য একটা প্রেসব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেক্যাম্পবেল বলেছেন, চীন ও রাশিয়ারপ্রধানরা না থাকায় ভারতকিন্তু অসন্তুষ্ট। মোদিও বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের যে উষ্ণতা, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে আলোচনা এবংবোঝাপড়া, এসব নিয়ে কোনোবিতর্ক নেই। এমনকি বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেওবাইডেনের যে আলাপচারিতা, ফটোঅপরচুনিটি—সেসব দেখে এবংতাঁদের শরীরের ভাষা দেখেও বোঝাযায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যেওসাম্প্রতিক যে টেনশন তৈরিহয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই জায়গাটাকেও অনেকটাইস্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিরাময়ের চেষ্টাকরেছে। সেটা একেবারে স্পষ্টহয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরএকটি কথায়। জোবাইডেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠকে বলেছেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক কিছু করাপ্রয়োজন দুই দেশকে আরোএগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।একটা দেশ আরেকটা দেশকেশুধু লেকচার দেবে, সেটাতে তিনি বিশ্বাস করেননা। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলর ইন্দো-প্যাসিফিক কো-অর্ডিনেটর কার্টক্যাম্পবেল বলেছেন, বাইডেন এই কথা মোদিকেজানিয়েছেন। বাংলাদেশেরপক্ষ থেকে এই অভিযোগইকিন্তু বারবার উঠেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন হলো, একটা সার্বভৌমরাষ্ট্রের নিজস্ব নির্বাচন। সেই নির্বাচন কিভাবেহবে আর কিভাবে হবেনা, এটা তারা নির্ধারণকরবে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার তাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে, এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্নরকমের চাপ সৃষ্টি করে।এ ছাড়া মার্কিনভিসানীতিতেও বলা হয়, কাদেরভিসা দেওয়া হবে না আরকাদের ভিসা দেওয়া হবে, সেটা বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হবে। বাইডেন এইকথা মোদিকে বলায় শুধু ভারতেরজন্য নয়, বাংলাদেশসহ প্রতিটিপ্রতিবেশী রাষ্ট্র, এমনকি উপমহাদেশের জন্যও এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্যবলে মনে করা হচ্ছে। জি২০সম্মেলনের মিডিয়া সেন্টারে এবার সবচেয়ে বেশিআলোচনা হয়েছে চীন ও রাশিয়ারপ্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি নিয়ে। তবে চীন ওজাপানের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকরা ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল। জাপান যে চীনের কার্যকলাপেরদিকেও কড়া নজর রাখছিল, সেটাও দেখা গেল। তবেচীনের প্রেসিডেন্ট না এসে এবংতারও আগে যেভাবে তাদেরমানচিত্রে অরুণাচল ও আকসাই চীনকেতারা দেখাল, যেভাবে তারা হিমালয়ে তাদেরসেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দিলনা, তাতে কিন্তু বিশ্বরাজনীতিরজটিলতা বাড়ল বৈ কমলনা। নরেন্দ্রমোদির দিক থেকে চেষ্টারকোনো ত্রুটি ছিল না। নরেন্দ্রমোদি বলেছেন, ‘বাড়িতে যখন অতিথি আসেতখন তাকে আমরা বাড়িরপ্রধান সোফায় বসতে দিই। আরদরকার হলে আমরা পাশেথাকা একটা ছোট চেয়ারেবসি।’ চীনকেআমন্ত্রণ জানানোর জন্য মোদি এরআগে জাপানে জি৭-এর সম্মেলনেদ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবেচীনকে আসার জন্য অনুরোধকরেছিলেন। সেই সময় চীনেরপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেওয়াহয়েছিল, সেই বৈঠকটা ভারতচেয়েছে। তা বেশ। ভারতহোস্ট হিসেবে তো উচিত কাজইকরেছে। নিউক্লিয়ার যুগে প্রতিবেশী কোনোরাষ্ট্রের সঙ্গে ঝগড়া করা, তাওআবার চীনের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রেরসঙ্গে, সেটা আর যা-ই হোক বুদ্ধিমত্তারপরিচায়ক নয়। একথা ঠিক, এসসিও বৈঠককেভারত কম গুরুত্ব দিয়েছিল, যেটাতে চীন ও রাশিয়াক্ষুব্ধ হয়েছিল। চীন ও রাশিয়াচেয়েছিল, আরো বড় করেএসসিও বৈঠক হোক। এইএসসিও বৈঠকে চীন-রাশিয়া এসেজি২০-এর দর্শনটাকে ভণ্ডুলকরে দিতে পারে—এইআশঙ্কায় মোদি এসসিওকে গুরুত্বদিতে চাননি। তিনি ভার্চুয়াল বৈঠককরেছেন। তার ওপর আবারএসসিওতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান আছে।চীনের সাংবাদিকদের ধারণা, ভারত এসসিও বৈঠকটাকেকম গুরুত্ব দেয়। তারা ভার্চুয়ালবৈঠক করে কেবল মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গুলিহেলনে। তাহলে কি প্রেসিডেন্ট শিচিনপিং চেয়েছেন জি২০ সম্মেলনের আগেনা এসে এর মাহাত্ম্যটাকেকমিয়ে দিতে? একটাবোঝাপড়া হলো। একটা সর্বসম্মতপ্রস্তাবও গৃহীত হলো। সেই প্রস্তাবেইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারেরাশিয়া ও চীনের দিকথেকে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্যকিন্তু থাকল না। সেটাঅবশ্য কেউ আশাও করেনি।আর যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব গ্রহণ, সেটা কী করেসম্ভব, যখন যুদ্ধ থামারকোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না? আমরাসাংবাদিকরা অবশ্য জি২০কে রাশিয়া-চীন আর ইউক্রেনযুদ্ধের বাইরে যেন ভাবতেই পারিনা। জি২০ সম্মেলনের আগেহয়েছে বিজনেস২০ সম্মেলন। তাতে বেশ ...
|