শিরোনাম: |
শেখ হাসিনার কাছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের খোলা চিঠি
গভীর সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে আসার আহবান
|
![]() খোলা চিঠিটি হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আপনাকে স্বাগতম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ও চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে আপনার যোগদান নি:সন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এমন একটি সময়ে জাতিসংঘে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন যখন প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের বিপরীতে হাঁটতে হচ্ছে আপনাকে। দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক চাপের পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের দাবিতে এসব দেশের সাথে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যমগুলোও প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র্যাব ও পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার উপর আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা। ঘোষণা করেছে পৃথক ভিসানীতি। প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে আসছে নতুন বার্তা, যার ওপর আপনার সরকার কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছে। সরকার প্রধান হিসেবে আপনি বিষয়গুলোকে যে দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখুন না কেন এ ব্যাপারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এখন সীমাহীন। প্রবাসীরা মনে করেন দেশ আজ অতিক্রম করছে স্মরণকালের ভয়াবহ ক্রান্তিকাল। গোটা জাতি নিপতিত গভীর সংকটে। দেশের চলমান এ সংকট গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও সামাজিক বৈষম্যের। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে অস্থির সময় পার করছে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ পাচারের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। রাষ্ট্রের মূল তিনটি স্তম্ভ প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগ হয়ে পড়েছে ভারসাম্যহীন। যা নতুন প্রজন্মকেও ভাবিয়ে তুলেছে। বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে তরুণরা স্বদেশ-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে দেশ ছাড়ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমরা আপনার সরকারের বৈধতা কিংবা একদলীয় শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইনা। সরকারে প্রবাসীদের অংশীদারিত্বও আমাদের এ মুহূর্তের দাবি নয়। মোটা দাগে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সচল রেখেছে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি। তারপরও স্বদেশে যারপরনাই অবহেলিত প্রবাসীরা। বিদেশে এসেও দেশের সরকার প্রধানগণ দলীয় গন্ডির বাইরে গিয়ে প্রবাসীদের খবর নেয়ার ফুরসত পান না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দীর্ঘ শাসনামলে দেশের ভৈাতিক অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়েছে তা অনস্বীকার্য এবং প্রশংসনীয়। আপনার সরকারের গৃহীত এসব মেগা প্রকল্প ঢাকা পড়েছে মেগা দুর্নীতির কালো মেঘে। ফলে “বেশী উন্নয়ন-কম গণতন্ত্র” শ্লোগানটি সমাদৃত হয়নি দেশবাসির কাছে। গণতন্ত্রহীনতা, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি জনগণ। আপনি ভালো জানেন-বাংলাদেশের মানুষ একবেলা কম খাবে কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করতে চাইবে শতভাগ। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি জনগণ। এ প্রজন্মের নতুন ভোটাররা জানে না কিভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়। সংগত কারণেই বিগত দু’দশকে বিকাশ ঘটেনি নতুন নেতৃত্বের । সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিতরা আগ্রহী নন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে। তরুণ প্রজন্ম এখন রাজনীতিকে দেখছে ঘৃণার চোখে। রাজনীতির প্রতি শিক্ষিত দেশপ্রেমিক শ্রেনীর মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে নির্লিপ্ততা। গণতন্ত্রকে অর্থবহ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে বিরোধী দলের সাথে কথা বলে উন্মুক্ত করে দিন পারস্পরিক দলীয় সম্প্রীতির দ্বার। জাতীয় জীবনে বিভেদ বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, অসহিষ্ণুতা দূর করে সহনশীলতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন হলেই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় না গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার। তারপরও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অতি প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে নির্বাচন। বিরোধী দলের মতো বিদেশীরাও গ্যারান্টি চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। সরকার ও জাতীয় সংসদ বহাল রেখে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়টিতে আর যাই হোক, সত্যিকারের আত্মতৃপ্তি লাভের কোনো সুযোগ নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাতের দিকে যাচ্ছে দেশ। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল। পক্ষান্তরে আপনার সরকার অটল তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানে। এমতাবস্থায় সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠলে ঘটতে পারে ভয়ংকর কিছু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। জীবনে আপনি যেমন অনেক কিছু হারিয়েছেন। তেমনি ঢের প্রতিদানও পেয়েছেন দেশবাসীর নিকট থেকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন চার বার। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে লব্ধ শিক্ষা ইতোমধ্যেই আপনাকে অনেক সতর্ক ও সচেতন করে তুলেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শাসনকাল ক্ষেত্রবিশেষে সাময়িকভাবে দীর্ঘায়িত হলেও তা কখনোই চিরস্থায়ী নয়। দেশের মানুষ শান্তি চায়। দ্রব্য সামগ্রী পেতে চায় ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই গণতন্ত্রের স্বার্থে সকল বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে আপনি সহনশীল ভ‚মিকা পালন করবেন এমন প্রত্যাশাই জনগণের। আপনি অনেকবার বলেছেন দেশের মানুষের কল্যাণ করাই আপনার জীবনের একমাত্র ব্রত। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর আপনার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই। আপনি বার কয়েক বেঁচে এসেছেন মৃত্যুর হাত থেকে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনি এবং একমাত্র আপনিই পারেন বাংলাদেশকে বর্তমান সংকট থেকে রক্ষা করতে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার চাবিকাঠি আপনারই হাতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ মূলক করার ব্যবস্থা করতে হবে আপনাকেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বিশ্ববাসীর সামনে আপনার সরকারের সাফল্য গাঁথা তুলে ধরার পাশাপাশি ঘোষণা দিন দেশ ও জাতিকে সংকট থেকে উত্তরণের। বর্তমান সংসদেই এর সুরাহা সম্ভব। নিদর্লীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান দাবি ছিলো আাপনার দলের। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আপনি পুনরায় ফিরে যান সেই সিদ্ধান্তে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সে সুযোগও সন্নিবেশিত করা হয়েছিলো পরবর্তী দু’টো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু তা করা হয়নি। বর্তমান সংসদেই আইন পাশ করুন অন্তর্বতীকালীন সরকারের। সেই সাথে ফিরিয়ে দিন গণভোটের অধিকার। সংশোধনী আনুন সংবিধানে। আমরা মনে করি জনগণের জন্য সংবিধান। সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময়কাল দু’বছর মেয়াদী হলেও আপত্তি থাকবে না। দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য এ সময়কাল জরুরী। আমরা মনে করি আপনার এমন ঘোষণা হবে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী। এজন্য দেশ ও জাতি আপনাকে স্মরণ করবে দীর্ঘদিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স¤প্রতি ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সিদ্ধান্তকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সমর্থন ও স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান শীর্ষে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বর দেশ। সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বাংলাদেশে যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এদেশে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশির বসবাস । যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী । করোনার সময় বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ১১.৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দিয়েছে দেশটি। দুর্যোগ ও দুর্বিপাকের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ছাঁয়ার মতো দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পাশে। রাশিয়া, চীন কিংবা ভারত নয় বাংলাদেশিরা তাদের উন্নত জীবনমানের জন্য বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ গণতান্ত্রিক বিশ্বকে। আপনার স্বজনরাও এসব দেশের অভিবাসী। তারাই আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির সহযোগী। তাদের ন্যায্য দাবি ও পরামর্শ উপেক্ষা না করে আমলে নিন। আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা হয়ে থাকতে চাই। কোন দেশ, জাতি বা ব্যক্তির প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবতী না হয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক বাংলাদেশ। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকুক বিশ্ব। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। -- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সচেতন বাংলাদেশি
|