শিরোনাম: |
‘পালটাপালটি’ কর্মসূচি ঘিরে বেড়েছে রাজনীতির উত্তাপ
|
দলীয় প্রধানের মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে অপরাজনীতি ছাড়তে বিএনপিকেও ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন আলটিমেটামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ রাজনীতির মাঠে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। আবার কেউ বলছেন কথার যুদ্ধ, শঙ্কার কিছু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পালটাপালটি আলটিমেটামের পরিণতি ভয়াবহ। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করা না যায়, তার মাশুল দিতে হবে পুরো জাতিকে। সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অপরাজনীতি ছাড়তে বিএনপিকে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে বিএনপিকে আগুন-সন্ত্রাস, নাশকতার রাজনীতি ছাড়তে হবে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। নতুবা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজনীতির কালো হাত গুঁড়িয়ে দেব। এর আগে রোববার নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, এ সময়ের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠাতে হবে। অন্যথায় কিছু হলে সব দায়দায়িত্ব সরকারের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠের রাজনীতিতে সরব দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে বিএনপি। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচির দিনগুলোতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তাদের ‘পালটাপালটি’ কর্মসূচি ঘিরে বেড়েছে রাজনীতির উত্তাপ। সেই উত্তাপে এবার যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। অন্যদিকে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের পালটাপালটি আলটিমেটামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মঙ্গল চায় না। ধীরে ধীরে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তারা শুধু খালেদা জিয়ার নয়, সাধারণ মানুষের ওপর ১৫ বছর ধরে জুলুম করে আসছে। জনগণেরও সময় আসবে। তখন আওয়ামী লীগের কী অবস্থা দাঁড়াবে তা বুঝতে হবে। এখানে আলটিমেটাম বা জেদাজেদির কোনো বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। আমরা আশা করি আওয়ামী লীগ এটা অনুধাবন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে আসছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কর্ণপাত করছে না। ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসুস্থ লোক চিকিৎসা পাবেন না-পৃথিবীতে এর কোনো নজির নেই। তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তিনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তার চিকিৎসা হবে না, আর ওয়ায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করবেন সরকারি টাকায়-তা হয় না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যদি নিজের টাকায় বিদেশে হয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? তিনি বলেন, আমরা বিএনপিসহ যারা রাজপথে আছি, এ পর্যন্ত নানা সহিংসতাকে পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এটা বিরোধী দলের দুর্বলতা নয়। এখন সরকারি দল যদি সহিংসতা করে বিরোধীদের মোকাবিলা করতে চায়, তবে বিরোধীদেরও জনগণের জন্য পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া পথ থাকবে না। আর সরকার যদি সঠিক পথে না হাঁটে সহিংসতার পুরো দায়দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে। এদিকে আলটিমেটামকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আবার বলছে কথার যুদ্ধ, এতে শঙ্কার কিছু নেই। জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি তো কোনো সংঘাতময় পরিবেশ দেখছি না। আমার মনে হয়, আলটিমেটাম, পালটা আলটিমেটামের কথা তারা কেবল মুখে-মুখেই বলছেন। এটা একটা কথার যুদ্ধ বা বাগযুদ্ধ হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের কথাবার্তা হবেই। সাধারণ মানুষও এখন আর এগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে না। তারা ভাবে এগুলো রাজনৈতিক দলের ব্যাপার। তাই এগুলো নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একই বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এখন বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যেসব পালটাপালটি আলটিমেটাম বা বক্তব্য দিচ্ছে, সেটার ৮০ শতাংশই ফাঁকা গলাবাজি। কারণ আমাদের সত্তর বছরের মাঠের গণরাজনীতির যে ধারা, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত ছাড়া বাকি সময়, সেটা নির্বাচনের আগে হোক বা পরে এই ধরনের পালটাপালটি বক্তব্যকে আমি ফাঁকা গলবাজির সঙ্গে তুলনা করব। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পালটাপালটি আলটিমেটামের পরিণতি ভয়াবহ। আমরা এখনই যদি অনুধাবন না করি যে, একটা ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে আছি। নইলে কিন্তু পুরো জাতি বিপদে পড়ব। যারা এসব বলছেন তারা কিন্তু এর মাশুল দেবে না। মাশুল দেবে এ দেশের জনগণ, সাধারণ মানুষ। তাই সবাইকে অনুরোধ করব সমস্যা সমাধানের জন্য আলাপ-আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করুন। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের যে অহমিকা, একগুঁয়েমি অর্থাৎ যে ধারায় তারা ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। তা আসলে একটা সংঘাত-সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তুলছে। সরকারের আচরণের ওপর অনেক সময় বিরোধী দলের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে, না সহিংস হবে এটা নির্ভর করে। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ওপর বহুমাত্রিক চাপ, এর মধ্যে থেকে তারা ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এটা নিশ্চিত, তারা গোটা দেশকে বিপদে ফেলছে। জনগণকে বিপদে ফেলছে। |