শিরোনাম: |
আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস ২০২৪
৪০ লাখ গৃহকর্মীকে শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান অক্সফ্যামের
|
বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ গৃহকর্মীকে শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফ্যাম। আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে রাজশাহীতে গৃকর্মীদের অধিকার রক্ষায় আয়োজিত র্যালি, পথসভা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই আহ্বানসহ ৯টি দাবি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার রাজশাহী শহরে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে যুক্ত হন দুই শতাধিক গৃহকর্মী, সরকারী কর্মকর্তা, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। দিনব্যাপী আয়োজনে গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় যে ৯টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো; শ্রম আইনে গৃহকর্ম পেশাকে অন্তর্ভূক্ত করা; গৃহকর্মীদের সামাজিক মযার্দা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া; গৃহকর্মে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা; গহকর্মীদের প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করা; গৃহকর্মীদের নির্ধারিত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক ছুটি, ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ করা, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর যথাযথ বাস্তবায়ন; গৃহকর্মীদের শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থন, গৃহকর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় কাযর্কর উদ্যোগ গ্রহণ এবং গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনকারীর দ্রুত শাস্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় আযোজিত র্যালী ও পথ সভার উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মীরা সমাজের বিচ্ছিন্ন কোন অংশ নয়। আমরা দেখেছি গৃহকর্মীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হলেও তারা সঠিক বিচার পান না। গৃহকর্মীরা নিয়োগের সময় কোনো চুক্তিপত্র পান না; দেয়া হয় না নির্ধারিত ছুটি। মাতৃত্বকালীন ছুটিও তাদের নেই। গৃহকর্মীদের পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত সম্ভব নয়। তাই গৃহকর্মীদের সংবেদনশীল আচরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পেশায় যুক্ত করতে সকলকে কাজ করা জরুরি।’ পথসভায় গৃহকর্মী মর্জিনা সুলতানা বলেন, ‘আমরা আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিই বলেই নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। তবে আপনারা আমাদের প্রাপ্য দিতে চান না। ৯৩ শতাংশ গৃহকর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না।” গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের আইনি কার্যক্রম সম্পন্নে হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরো বেলন, “শ্রমিক হিসেবে কাজ করেও নিজেদের শ্রমিক বলতে পারি না। কারণ আমরা শ্রমআইনেই অন্তভুক্ত নই।” আমরা গৃহকর্মকে শ্রমআইনের অন্তর্ভুক্তি চাই।” র্যালি ও পথসভা শেষে ‘গৃহকর্মী পেশায় নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অক্সফ্যাম ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধের উপস্থাপন করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়ক তারেক আজিজ। । বিশ্বব্যাংকের ২০২১ এর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের ৪০ লাখ গৃহকর্মীর কাজের মূল্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। যা জিডিপির অন্তর্ভুক্ত নয় । এছাড়াও সুনীতি প্রকল্পের পরিচালিত ২০২২ এর গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৮৪ শতাংশ গৃহকর্মী দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন। ৮৭ শতাংশ অনাবাসিক/খন্ডকালীন গৃহকর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পান না। মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না ৯৩ শতাংশ এবং কোনো গৃহকর্মীর নিয়োগপত্র নেই।’ গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) জনাব মো. রশীদুল হাসান, পিপিএম, উপস্থিত ছিলেন। তিনি গৃহকর্মীদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগোর পাশাপাশি নাগরিকসমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব, বিভাগীয় শ্রত অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, সুজনের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, রাসিক কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু, গৃহকমীর্দের পক্ষে কুলসুম খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌসসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর প্রতিনিধিবৃন্দ। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর জুন মাসের ১৬ তারিখ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস পালিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করছে অক্সফ্যাম। ইতোমধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পেশায় নিয়োজিত প্রায় ১৮,০০০ নারী গৃহকর্মীদের পেশাগত ও জীবন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। |