শিরোনাম: |
রেলওয়েতে স্বৈরাশ্বাসকের এজেন্টদের ঘুষ-দূর্নীতির মহাউৎসব
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের এসআরআই ফোরকানের লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ-দূর্নীতির অভিযোগ
|
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে ৫ই আগস্টে স্বৈরাচরের পতনের পর দেশের মানুষ যেন নতুন জীবন পেয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসররা সরকারী সকল দপ্তরে দূর্নীতির মহা উৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাশ্বাসকের এজেন্টদের ঘুষ-দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন না হলে দেশের মানুষ গণঅভ্যুথানের সুফল পাবে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ইন্সপেক্টর (এসআরআই) মো: ফোরকান হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ফোরকান হোসেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের এসআরআই হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে নিজের পকেট ভারী করে যাচ্ছেন। ট্রেনে টিটি‘ই বুক না দিয়ে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তিভিত্তিক ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন টিটি‘ই জানান, ঢাকা টু সিলেট রুটে চলাচলকারী হাওড় এক্সপ্রেসে (৭৭৭, ৭৭৮) সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা, খাবার গাড়ী ও পাওয়াকার থেকে সপ্তাহে দুই হাজার করে চার হাজার টাকা, ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী এগারো সিন্ধু (৭৩৮,৭৪৯,৭৫০) প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা, , (৭৩৭) মাঝেমধ্যে টিটি‘ই বুক হয়, এছাড়াও উক্ত গাড়ির খাবার গাড়ী থেকে দুই হাজার টাকা করে সপ্তাহে ৮ হাজার টাকা, ঢাকা টু চট্টগ্রাম চলাচলকারী মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২) খাবার গাড়ি থেকে সপ্তাহে এক হাজার টাকা স্টুয়ার্ড ও খাবার গাড়ীর লোকের মাধ্যমে এসআরআই ফোরকান গ্রহন করেন। আবার কিছু গাড়ীতে টিটি‘ই দের বুক দিয়ে চুক্তিভিত্তিক টাকা গ্রহন করেন। ঢাকা টু সিলেট রুটে চলাচলকারী কালনি এক্সপ্রেস (৭৭৩,৭৭৪) টিটিই বুক থেকে বিনা টিকিটের যাত্রী ছেড়ে দিয়ে অবৈধ আয়ের চুক্তি হিসেবে টিটি‘ই গণ সপ্তাহে দুই হাজার টাকা এবং খাবার গাড়ি থেকে সপ্তাহে এক হাজার টাকা, ঢাকা টু সিলেট রুটে চলাচলকারী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯, ৭১০) সপ্তাহে দুই হাজার টাকা, খাবার গাড়ি থেকে সপ্তাহে এক হাজার টাকা, ঢাকা টু ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭,৭০৮) সপ্তাহে দুই হাজার টাকা, খাবার গাড়ি থেকে সপ্তাহে এক হাজার টাকা, ঢাকা-জামালপুর রুটে চলাচলকারী যমুনা এক্সপ্রেস (৭৪৫,৭৪৬) ও ঢাকা টু তারাকান্দি রুটে চলাচলকারী অগ্নীবীণা (৭৩৫, ৭৩৬) খাবার গাড়ী থেকে সপ্তাহে চার হাজার টাকা, খাবার গাড়ির লোক ও স্টুয়ার্ডের মাধ্যমে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে এই মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন এসআরআই মো: ফোরকান হোসেন। প্রত্যেকটা গাড়ির টিটি‘ই গন ডিউটি শেষে তাকে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য করেন এসআরআই। টিটি‘ই দের প্রতিদিন এর দায়িত্ব বন্টনের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রতিনিয়তই ৮-১০টা গাড়ীতে টিটি‘ই বুক না হয়ে এভাবেই মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে চালাচ্ছেন দায়িত্বরত এসআরআই। কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা বিনা টিকেটে খাবার গাড়ীতে করে টিটি’ই বা খাবার গাড়ীর লোকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নিজ গন্তব্যে পৌছান। কয়েকটি খাবার গাড়ীর লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এসআরআই ও টিটি’ই দের সাথে চুক্তিবদ্ধ অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহন করে। সারাদেশে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের ফলে প্রতি বছর ৫শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই হিসেবে বিগত ১৬ বছরে রেলের গচ্চা গেছে ৮ হাজার কোটি টাকা। বিনা টিকিটে যাত্রী বহন ঠেকাতে সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি ট্রেনের খাবার গাড়িতে অবৈধ যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি ধরা পড়ায় ২ টি ট্রেনের ক্যাটারিং লাইসেন্স বাতিল হলেও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসআরআই ফোরকানসহ অনেকেই আঙ্গুল ফুলে রাতা-রাতি কোটিপতি বনে গেছেন। এই বিষয়ে এসআরআই মো: ফোরকান হোসেনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হন নাই। এইবিষয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) নাজমুল হক এর সাথে তিনি জানান আপনাদের যদি কোন তথ্য প্রমান থাকে তাহলে আমাকে হোয়াটস এ্যাপে পাঠিয়ে দিবেন আমি দেখবো। প্রয়োজনে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) এর সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। রেল ভবন সুত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। একই সময়ে আয় করেছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করেছে রেলওয়ে। শুধু অবৈধ যাত্রী পরিবহনের দিকে একটু কঠোর দৃষ্টি দিলেই আরো ৫০০ কোটি টাকা ভূর্তুকি কমানো যেত। যেভাবে ট্রেনে ওঠেন অবৈধ যাত্রী: নিরাপদ যাত্রীসেবা নিশ্চিতে ট্রেন পরিচালনার জন্য ট্রেনে কিছু অত্যাবশ্যকিয় কর্মচারির প্রয়োজন হয়। তারা প্রত্যেকেই বেতনভুক্ত কর্মচারি। কিন্তু তবুও তারা নিজেদের স্বার্থে ট্রেনে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় অবৈধ যাত্রী তোলেন। এসআরআই মো: ফোরকান হোসেনের দূর্নীতির টাকা দিয়ে রেলের উর্ধ্বতন কোন কোন কর্মকর্তাকে খুশি রেখে দূর্নীতি করে যাচ্ছেন এবং তার নামে বেনামে অবৈধভাবে বিভিন্ন সম্পত্তির খোজ নিয়ে অনুসন্ধানী দ্বিতীয় পর্বে থাকবো। অনুসন্ধান চলছে, আমাদের সাথেই থাকুন। |