শিরোনাম: |
প্লট ও রূপপুর প্রকল্পে হাসিনার দুর্নীতি, থমকে আছে তদন্ত
|
শিগগিরই ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় স্থাপন করা হবে। ওই কার্যালয় চালু হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সঙ্গে বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ভলকার তুর্কের সফরের প্রথম দিনই গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে কয়েকজন উপদেষ্টা বৈঠক করেন। পরে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে কথা বলেন। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটা কার্যালয় চালু হবে। কার্যালয় চালু হলে সবচেয়ে বেশি যে সুবিধা হবে তা হলো, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ক্ষেত্রগুলো, মানবাধিকার পরিষদ সরাসরি তদন্ত করতে পারবে।’ এই কার্যালয় স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মতি আছে বলেও জানান শারমিন মুরশিদ। তিনি আরো বলেন, যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসে, চলে যায়, তারা যদি নিজেদের অপরাধের তদন্ত করে, সে তদন্ত তো হয় না। নাগরিক সমাজ থেকে যখন তদন্ত করা হয়, অথবা সত্যটা যখন তুলে ধরা হয়, তখন তাদের ওপর নির্যাতন আসে এবং নানা চাপের মুখে থাকতে হয়। সেই কথাগুলো (নাগরিক সমাজের চাপে পড়ার কথা) ব্যক্ত করা যায় না, রিপোর্টও করা যায় না। জানা গেছে, উপদেষ্টারা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে তাঁরা কিভাবে দেখছেন, তা-ও জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে যার যার ক্ষেত্র থেকে বলেছি চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং তারা (মানবাধিকার পরিষদ) কোথায় আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়। তারা (মানবাধিকার পরিষদ) সহায়তামূলক অবস্থান থেকে এখানে এসেছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে ভলকার টুর্ক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সৌজন্য সাক্ষাতে ভলকার টুর্ক বাংলাদেশের বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপের প্রশংসা করেন। এর পাশাপাশি তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে প্রধান বিচারপতির নেওয়া উদ্যোগের সফলতা কামনা করেন। বিশেষ করে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কমিশন গঠন দেশে সুশাসন নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সাক্ষাতে বিচার বিভাগের প্রধান দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করার প্রস্তাবে ‘না’ বর্তমান বাস্তবতায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সচিবালয়ে ভলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা বলেন, “মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভলকার টুর্ক কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে আমি বলেছি, এটা বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ‘পেনাল সিস্টেম’ ও শত বছরের ‘জাস্টিস সিস্টেমে’ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যে ফ্যাসিস্টদের হাতে হাজার হাজার তরুণ নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচারকে সামনে রেখে হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করার প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া যেকোনো বড় ধরনের আইনগত পরিবর্তন সমাজ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রেখে করতে হয়।” আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচারকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন আইনগত সংস্কারে জড়িত রয়েছে। এ ছাড়া ফরেনসিক সাপোর্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট বা ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়েও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা। ভলকার টুর্ককে আশ্বস্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, এই ট্রাইব্যুনালে সুবিচার করা হবে। প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা থেকে এটা করা হচ্ছে না। অবিচার করার জন্য আগের আদালতে যে রকম হয়েছে, সে রকম অবিচার করা হবে না। এখানে কোনো কিছু লুকানোর নেই। যে কেউ এসে এই বিচার দেখতে পারবে। আসিফ নজরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কাজ, বিশেষ করে সংস্কারকাজ, ‘ট্রানজিশনাল ট্রান্সফরমেশন’, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা জানানো হয়েছে। দুই দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আসেন ভলকার টুর্ক। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সফরকালে হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতার আশ্বাস গতকাল ভলকার টুর্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমাদেরই অনেক জনগণ, এর ভেতর কিভাবে রোহিঙ্গাদের এত দিন রাখব? প্রতিদিন রোহিঙ্গা দু-চারজন করে আসছে, আমরা কত দিন তাদের খাওয়ায়ে-পরায়ে রাখব? ফলে তারা যেন দ্রুত তাদের দেশে ফেরত যেতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছি। এ ব্যাপারে তারা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’ |