শনিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম: সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্রুপ এ       রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু, সায়মন পেল জিএসএ       আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও আছে রাজনৈতিক সমীকরণ       আধিপত্য কায়েম করতে সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলছে ভারত : রিজভী       আওয়ামী দূষিত লোকদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করা সরকারের দায়িত্ব : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান       সরকারকে ব্যর্থ করতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে : মোশাররফ হোসেন       বিভাগ না দিয়ে হাসিনা কুমিল্লাবাসীকে অপমানিত করেছেন : জামায়াত আমির      
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন কাঠামো ও চাকরি নীতিমালা করতে হবে : মাসুদ সাঈদী
প্রকাশ: রোববার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:৩৪ এএম |

পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নীতি-নৈতিকতার অধঃপতনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমরা কঠিন সময় পার করছেন। তাদের কোনো বেতন স্কেল নেই। সুতরাং দেশের প্রথিতযশা আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য বেতন কাঠামো ও চাকরির নীতিমালা তৈরি করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

শনিবার (২ নভেম্বর) পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি কর্তৃক আয়োজিত উপজেলা ইমাম সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।


 
মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোনো পেশা নয়, বরং এটা হচ্ছে একটি মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নবী করীম (সা.) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য এই বলে দোয়া করেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার। যেহেতু ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তাই ইমামকে এ কাজের জন্য যেমন যোগ্য হতে হবে, তেমনি তাকে মহৎ গুণের অধিকারীও হতে হবে। তাকে হতে হবে সৎ, নিষ্ঠাবান তাকওয়াধারী আল্লাহওয়ালা আলেম।


একজন ইমাম শুধু মসজিদের ইমামই নন, বরং তিনি সমাজেরও ইমাম। একজন ইমাম হলেন মানবতার পথপ্রদর্শক।
ইমামদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘সম্মানিত ইমামরা জনসাধারণকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দানের পাশাপাশি তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। মসজিদে নববীতে আখেরি নবী সাইয়্যেদুল মুরসালিন ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আজীবন ইমামের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।


মসজিদে নববীকে তিনি শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং সমাজ উন্নয়নের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমরা যদি প্রতিটি মসজিদকে নবীজির দেখানো সেই মসজিদে নববীর রোল মডেল রূপে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, সমাজে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, মসজিদের ইমামরা যেমন জাতির আমলগত সংস্কারের জিম্মাদার, তেমনি আকিদাগত সংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করারও পুরাপুরি দায়িত্বশীল। বাতিল আকিদা ও মতবাদকে খণ্ডন করা এবং ভ্রান্ত চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা তাদের প্রধান দায়িত্ব। যদি আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ পরিপন্থী কোনো আওয়াজ রাষ্ট্রে উঠে অথবা রাসূল (সা)-এর রিসালাতের অবমাননা করা হয়, তাহলে বাতিল শক্তির  ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক ও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা ইমামদের কর্তব্যও বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপজেলা ইমাম সম্মেলনের প্রধান অতিথি মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যের পরিবর্তে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর থেকে এযাবৎ দলের সার্বভৌমত্ব ও দলীয় নেতাদের আনুগত্য, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব চলছে। যার কারণে মানুষ সুশাসন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম-খুন, ধর্ষণ, মাদক ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের সয়লাবে জাতীয় জীবনে চরম দুর্ভোগ ও অশান্তি চলছে।

আল্লাহর ভয় ও ধর্মীয় শিক্ষা না থাকার কারণে শেখ হাসিনা সমাজসেবক থেকে দানবে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, ক্ষমতার মোহে দেড় দশক ধরে শত শত মানুষকে গুম, খুন ও নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে খুনি হাসিনা। কুণ্ঠাবোধ করেনি দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে। বন্ধুত্বের নামে ভারতের দাসত্বের জিঞ্জিরে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। দেশের প্রতিটি সেক্টরকে শেখ হাসিনা দুর্নীতি, লুটপাট এবং হাজারো অনিয়মে ধ্বংস করে দিয়েছে। হাসিনা জুলাই অভ্যুত্থানের বীরদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের পর আমরা বাংলাদেশে আর কোনো দানব, কোনো স্বৈরাচার-খুনিকে দেখতে চাই না। দানব স্বৈরাচারদের হাত থেকে বাঁচতে আল্লাহভীতি সম্পন্ন সত্যিকারের জনগণের খাদেম ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী যাকে যেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে। একটি শান্তিময় ইনসাফপূর্ণ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বেশি বেশি করে আলেম নির্বাচিত করে পার্লামেন্টে পাঠাতে হবে।

সময়ের দাবি অনুযায়ী খুতবার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করার আবেদন জানিয়ে উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে মাসুদ সাঈদী বলেন, ধরাবাঁধা ছাপানো বারো চান্দের একই খুতবা বছরের পর বছর পড়া উচিত নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমসাময়িক অবস্থা ও ঘটনাবলি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সামনে রেখে খুতবার ভাষণ প্রস্তুত করা প্রয়োজন। পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে খুতবা প্রদান প্রয়োজন। খুতবায় আকিদার বিষয়বস্তুকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া বেশি প্রয়োজন। কারণ আকিদা শুদ্ধ হলে ইবাদত শুদ্ধ, আর তা ভুল হলে ইবাদতও ভুল হয়ে যায়। আকিদার বিভ্রান্তিতে একজন মুমিন কখনো কখনো ঈমান থেকেও খারিজ হয়ে যায়।

জিয়ানগর উপজেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় উপজেলা ইমাম সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল হালিম। 

সম্মেলনে বক্তব্য দেন টগড়া দারুল ইসলাম কামিল মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো. হারুন অর রশিদ, ওলামা বিভাগের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা শওকত আলী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ইয়াহইয়া হাওলাদার, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলার উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান, ইমাম সমিতির জিয়ানগর উপজেলার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মো. আলী হোসেন, উপদেষ্টা মো. তৌহিদুর রহমান রাতুল, উপদেষ্টা মাওলানা মো. ছারোয়ার হোসেন মোল্লা।

এদিকে, আজ বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ২ নম্বর শুক্তাগড় ইউনিয়নে স্থানীয় কেওতা ঘিগড়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী। 

তিনি জামায়াতের শহীদ নেতৃবৃন্দের সততার সঙ্গে মন্ত্রী ও এমপির দায়িত্ব পালনের উদাহরণ টেনে বলেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাদের ত্যাগ আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। মন্ত্রী বা এমপির দায়িত্ব পালনের সময় তাদের কারো একবিন্দু দুর্নীতি খুঁজে পায়নি তখনকার সরকার। 

মাসুদ সাঈদী সহযোগী সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ৫টি কাজ করতে হবে। যথা- কুরআন পড়তে শেখা ও কুরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করা, প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লার ইউনিটে সাপ্তাহিক বৈঠকে উপস্থিত থাকা, সংগঠনের তহবিলে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা করা, আত্মীয়- স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে শরিক হওয়ার দাওয়াত দেয়া। এই কাজগুলি আঞ্জাম দেওয়ার মধ্যদিয়ে জামায়াতের কর্মী ও রুকন হিসেবে শপথ নিয়ে নিজেকে সংগঠনের সঙ্গে একাকার হয়ে যেতে হবে।

সহযোগী সদস্য সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. জহিরুল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম, রাজাপুর উপজেলা আমির মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন, উপজেলা সেক্রেটারি মোহাম্মাদ কবির হোসেন, ঝালকাঠি পৌরসভা আমির মাওলানা মো. মনিরুজ্জামান, ঝালকাঠি জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু বকর মো. সিদ্দিক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঝালকাঠি জেলা সভাপতি মো. সায়েম, জেলা সেক্রেটারি এনামুল হাসান, বরিশাল জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী মো. শাহ আলম প্রমুখ।






আরও খবর


সম্পাদক : এ এইচ এম তারেক চৌধুরী, সহ-সম্পাদক: এম এ ওয়াহেদ- ০১৮৫৯-৫০৬৬১৪
প্রধান কার্যালয় : নাহার ম্যানশন ৫ম তলা, ১৫০ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা -১০০০।
নিউজ রুম: ০২৪৭১১০৪৫৪, ০১৬৭৭২১৯৮৮০।
e-mail: [email protected], web: 71sangbad.com