বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম: মাওলানা মামুনুল হককে দেখতে হাসপাতালে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান       হাইকমিশনে হামলা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র : গোলাম পরওয়ার       আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও বিএইচটি ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর মধ্যে পে-রোল চুক্তি স্বাক্ষর       আজকের শেয়ারবাজার        এশিয়ার তিন দেশ সফরে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী       ব্যাংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়       আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ      
উপকূলের জমিতে বাড়বে লবণাক্ততা উত্তরাঞ্চলে ফসল উৎপাদন কমতে পারে ২৫ শতাংশ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪, ৯:৩৬ এএম |

২১০০ সালের মধ্যে দেশের উপকূলীয় জমিগুলোতে লবণাক্ততা আরো বৃদ্ধি পাবে। আর খরা বৃদ্ধির কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ধান, গম এবং শাক-সবজির উৎপাদন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে রাতের গড় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। শীতকালে বৃষ্টিপাত ১.৩ মিমি হারে কমতে পারে।


অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১.৭৭ থেকে ২.৮২ ফুট বাড়তে পারে। জলবায়ুর এসব সূচকের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেশের কৃষিতে নানা মাত্রায় ক্ষতির কারণ হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান মিলনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো চলমান প্রবণতাগুলোর ওপর গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গবেষণা নিবন্ধটি বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী স্প্রিঞ্জারের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সয়েল-ওয়াটার-প্লান্ট নেক্সাস’ বইতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণা নিবন্ধটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন সে বিষয়ে বিস্তারিত ও সময়ভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

গতকাল আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি) শীর্ষক এই সম্মেলনে নজর এখন বিশ্ববাসীর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের অনিয়ম, খরা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে পড়ছে।


এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে সামনের দিনে প্রধান খাদ্যশস্য বিশেষ করে ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে রাতের তাপমাত্রা : উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে রাতের তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৭৫-২১০০ সালের মধ্যে রাতের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা বাড়লে ধান ও গম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ধানগাছের ফুল ফোটার সময় রাতের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গাছে ফলনের পরিমাণ কমে যায়। গমের ক্ষেত্রেও দানা গঠনের সময় তাপমাত্রা বেশি থাকলে ফলন কমে যায়। এভাবে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শস্য উৎপাদনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

অনিয়মিত বৃষ্টি ও খরা : দেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রতিবছর প্রায় ৮.৪ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লেও শীতকালে এর পরিমাণ ১.৩ মিলিমিটার হারে কমছে। তবে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি শীতকালে কম বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে সেচনির্ভরতা বাড়াচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে দেশে বন্যা ও খরার মাত্রা বাড়বে। অতিরিক্ত বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। আবার শীতকালে কম বৃষ্টিপাতের ফলে ফসলের জন্য পর্যাপ্ত পানির সংকট দেখা দেয়। এতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরার কারণে ধান, গম এবং শাক-সবজি উৎপাদনে গড়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।


সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা : উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষির জন্য আরেকটি বড় হুমকি। আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ০.৫৪ থেকে ০.৮৬ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে উপকূলীয় জমিগুলোতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করবে এবং শস্য উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করবে। বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০ শতাংশ কৃষিজমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এটি ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।

উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে দেশের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রতি দশকে প্রায় ০.৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাবে। এই হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৭৫-২১০০ সালের মধ্যে প্রায় ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাতের গড় তাপমাত্রা প্রতি দশকে প্রায় ০.৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছে। বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৭৫-২১০০ সালের মধ্যে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে জলবায়ু থেকে উত্তোরণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় অভিযোজন, শস্য বৈচিত্র্যকরণ ও জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। একাধিক শস্য চাষের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। ধান, গমের পাশাপাশি শাক-সবজি ও ডাল শস্য চাষ করলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের আয় বাড়ানো সম্ভব। মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে জৈব সার, কম্পোস্ট এবং অন্যান্য জৈব উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উচ্চ তাপমাত্রা, খরা, লবণাক্ততা এবং রাতের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন জাত উদ্ভাবনে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। এ ছাড়া পানির দক্ষ ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। বর্ষার সময় পানি সংরক্ষণ করে তা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব। সঠিক ও দ্রুত আবহাওয়া তথ্য পেলে কৃষকরা সঠিক সময়ে ফসল রোপণ, সেচ প্রদান এবং সংগ্রহের কাজ করতে পারেন।






আরও খবর


সম্পাদক : এ এইচ এম তারেক চৌধুরী, সহ-সম্পাদক: এম এ ওয়াহেদ- ০১৮৫৯-৫০৬৬১৪
প্রধান কার্যালয় : নাহার ম্যানশন ৫ম তলা, ১৫০ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা -১০০০।
নিউজ রুম: ০২৪৭১১০৪৫৪, ০১৬৭৭২১৯৮৮০।
e-mail: [email protected], web: 71sangbad.com