শনিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিরোনাম: সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্রুপ এ       রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু, সায়মন পেল জিএসএ       আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও আছে রাজনৈতিক সমীকরণ       আধিপত্য কায়েম করতে সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলছে ভারত : রিজভী       আওয়ামী দূষিত লোকদের প্রশাসন থেকে বিতাড়িত করা সরকারের দায়িত্ব : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান       সরকারকে ব্যর্থ করতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে : মোশাররফ হোসেন       বিভাগ না দিয়ে হাসিনা কুমিল্লাবাসীকে অপমানিত করেছেন : জামায়াত আমির      
ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৪৬ এএম |

যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুরুর এক ঘণ্টা পরে বৈরুতের ছবি। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও ইসরাইলি ড্রোন সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে - সংগৃহীত
লেবাননে এখন সকাল। এর অর্থ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষিত ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইসরাইল সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলেও বেসামরিক মানুষজন এখনি যেন বাড়িঘরে ফিরে না যায় ,কয়েক ঘণ্টা আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈরুতের দু’টি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আবারো বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে।

তবে যদি এই চুক্তি বজায় থাকে, তবে এটি ইসরাইল ও ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।
দু’পক্ষের মাঝে চলমান এই যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে গত সেপ্টেম্বর মাসে, যখন ইসরাইল বোমা হামলা বাড়ায় এবং সীমিত স্থল অভিযান শুরু করে।
যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে এবং এই সময়ের মাঝে হিজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারণ
মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেতানিয়াহু একটি বিবৃতি দিয়ে এ ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই সময় হোয়াইট হাউস থেকে চুক্তিটিকে বৃহত্তর শান্তির পথ হিসেবে স্বাগত জানান। এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।


১. ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া
এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইসরাইল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে।
হিজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসাবে দেখা হতো।
কিন্তু হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরাইলের পক্ষে চলে গেছে।

২. ক্লান্তি
এই শব্দটি তিনি সরাসরি ব্যবহার করেননি। তবে তিনি এটি বলেছেন যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন।

ইসরাইলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দু’দিকে দু’টি দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরো বেশি ইসরাইলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।

৩. হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা
হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হলো হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া।
হামাস বরাবরই মনে করেছে, ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-এর বাকি সদস্যরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়বে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করার জন্যই তারা এই যুদ্ধ করছেন। যদিও তার এই দাবিটি বিতর্কিত।

গাজায় এখনো আটক থাকা ইসরাইলি বন্দীদের পরিবার ও আত্মীয়রা নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং বন্দীদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাইডেনের বহির্মুখী প্রশাসনের কারণে এই শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। যা এ মাসে ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঠিকভাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে তার ঐতিহাসিক বিজয় এ অঞ্চলের নেতাদের শান্তির দিকে নিয়ে যাবে এবং আমরা ঠিক এটাই ঘটতে দেখছি।’

তবে এই যুদ্ধ বিরতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই চুক্তির আওতায় ইসরাইলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের পর দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার লেবানিজ সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তাদের কিভাবে মোতায়েন করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সামরিক বাহিনীর অদভিযোগ তাদের এ দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য সম্পদ, অর্থ, জনবল এবং সরঞ্জাম নেই।

কিভাবে কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি?
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। তিনি জানান, পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে ইসরাইলি সেনাদের ‘পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণে এবং হিজবুল্লাহ উত্তরে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে লেবাননের সামরিক বাহিনী ব্লু লাইনের চারপাশের এলাকায় টহল দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সামরিক, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসঙ্ঘের অন্তর্বর্তী বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই এলাকায় চুক্তি কার্যকর করতে সহায়তা করবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে।

লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সৈন্য থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা এমটিসির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা করবে। এ পরিকল্পনাটিতে ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি’ হতে পারে এমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দক্ষিণ লেবাননে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।

হিজবুল্লাহ কী, কোথায় কাজ করে?
হিজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি শিয়া মুসলিম সংগঠন। এটি লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে।

১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরাইলের বিরোধিতা করার জন্য ওই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া শক্তি ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছিল হিজবুল্লাহ। তখন দেশটির গৃহযুদ্ধের সময় ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল।

হিজবুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সংগঠনটির উপস্থিতি দেখা যায়।

এর সশস্ত্র শাখা লেবাননে ইসরাইলি ও মার্কিন বাহিনীর ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল। লেবানন থেকে ২০০০ সালে ইসরাইল যখন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে, হিজবুল্লাহ তখন সেই সৈন্য প্রত্যাহারের কৃতিত্ব নেয়।
এরপর থেকে হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার যোদ্ধা এবং বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, পাশাপাশি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ইসরাইলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে চলেছে।

গোষ্ঠীটিকে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্র, ইসরাইল, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো ও আরব লিগ একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।
হিজবুল্লাহর একটি ভয়াবহ আন্তঃসীমান্ত অভিযানের ফলে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে ২০০৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়।

ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর হুমকি মোকাবেলায় দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ করলেও গোষ্ঠীটি টিকে যায় এবং এরপর থেকে তাদের যোদ্ধা সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ নতুন ও উন্নত অস্ত্রের ভাণ্ডারও গড়ে তোলে।






আরও খবর


সম্পাদক : এ এইচ এম তারেক চৌধুরী, সহ-সম্পাদক: এম এ ওয়াহেদ- ০১৮৫৯-৫০৬৬১৪
প্রধান কার্যালয় : নাহার ম্যানশন ৫ম তলা, ১৫০ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা -১০০০।
নিউজ রুম: ০২৪৭১১০৪৫৪, ০১৬৭৭২১৯৮৮০।
e-mail: [email protected], web: 71sangbad.com