শিরোনাম: |
কারিকুলামে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের স্মৃতি
অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে বাড়ানো হবে কো-কারিকুলাম কার্যক্রম
|
২০২৪-এর স্মৃতিময় জুলাই-আগস্ট মাসের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ য্ক্তু হচ্ছে শিক্ষা কারিকুলামে। একই সাথে আগামী শিক্ষাবর্ষে কো-কারিকুলাম হিসেবেও শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকবে জুলাই-আগস্ট মাসকে নিয়ে নানা কার্যক্রম। বিশেষ করে গত চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ ছয় মাস শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাদের পড়ালেখায় বেশ ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জানুয়ারি মাস থেকেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে শ্রেণিকার্যক্রম ও কো-কারিকুলাম কার্যক্রম জোরদারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষা সংশ্লেষবিহীন বিভিন্ন ইস্যুতে আয়োজিত সভা-সমাবেশে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্ষতি এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই এই নতুন পদক্ষেপ নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুলাই মাস থেকেই বিভিন্ন দাবি এবং ইস্যুতে রাজপথে সরব শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মধ্য জুলাই থেকে আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখ পর্যন্ত রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে শিক্ষার্থী ও নিরীহ জনতার রক্তে। অবশেষে ৫ জুলাই দুপুরের পর ছাত্র-জনতার বহু জীবন ও রক্তের বিনিমনে দীর্ঘ দেড় যুগ পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে পুরো বাংলাদেশ। কিন্তু তার পরেও প্রকৃত অর্থে দেশে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। পতিত আওয়ামী লীগের দোসর ও সুবিধাভোগীরা নানাভাবে দেশ অস্থিতিশীল করতে একের পর এক পাঁয়তারা করছে। নামে-বেনামে কিংবা অহেতুক নানা ইস্যু তৈরি করে দাবি আদায়ের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করছে। আর এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ছাত্ররা এখনো রাজপথে সরব উপস্থিত থেকে ধৈর্যের সাথে সবকিছু মোকাবেলা করছে; কিন্তু এভাবে শিক্ষার্থীদের রাজপথে আর যাতে থাকতে না হয় সে জন্য তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে কো-কারিকুলামের মাধ্যমে অর্থাৎ পাঠ ও শিখন কাজের বাইরেও জুলাই-আগস্টের নানা স্মৃতি নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে তাদের। এমনকি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও এই কো-কারিকুলাম কাজে সম্পৃক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সংশ্লেষবিহীন বিভিন্ন ইস্যুতে আয়োজিত সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। ফলে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া এ ধরনের অনাহূত কার্যক্রম শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে নানা উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী-শ্রেণিকক্ষমুখী রাখা এবং বিভিন্ন ধরনের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন সাবই। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে শ্রেণিকার্যক্রম ও কো-কারিকুলাম কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সে বিষয়ে বেশ কিছু উদাহরণও দেখানো হয়েছে। যেমন এসবের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা পরিচ্ছনতা অভিযান। এ ছাড়া ২০২৪-এর জুলাইকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে বিজয়ের ৩৬ জুলাইভিত্তিক গ্রাফিতি অঙ্কন। নির্বাচিত গ্রাফিতি নিয়ে সফট অ্যালবাম তৈরি। শ্রেষ্ঠ গ্রাফিতিকে পুরস্কার দেয়া। ‘ক্রান্তিকালে তারুণ্য দুর্জয়’ ভিত্তিক থিম সং তৈরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশন। সফট অ্যালবাম তৈরি। শ্রেষ্ঠ থিম সংকে পুরস্কার দেয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হবে। একই সাথে অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে আরো থাকবে- গার্লস স্কুল ও কলেজে পার্সোনাল হাইজিন বিষয়ক প্রশিক্ষণ। জাতীয় দিবস ‘আনুষ্ঠানিক তারুণ্য কুচকাওয়াজ’ বিএনসিসি-স্কাউট-রোভার সহযোগিতা। ‘জুলাই বিপ্লব কী, কেন, কিভাবে’ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের আলোচনা সভা। ‘তরুণ চোখে নৈসর্গ দর্শন’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটস্থ নান্দনিক স্থান, নদীতীর, চর, উপকূল, পাহাড়, টিলা, ফসলিমাঠে দলবদ্ধ ভ্রমণ। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারুণ্য উৎসবকে ২০২৫ আনন্দময় করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-ভলিবল-ফুটবল খেলার আয়োজন। তরুণদের উদ্যোক্তা কর্মী হিসেবে আগ্রহী করতে (জেনারেশন-জেড জেনজি) উদ্যোক্তা বিষয়ে বির্তক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবির) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, গত কয়েক মাসে শিক্ষার্থীদের অনেকটা সময় রাজপথেই কাটাতে হয়েছে। এখন তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে চাই। আবার তারা যেন বিজয় এবং স্মৃতিময় জুলাই-আগস্টকে ভুলে না যায় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সেই বিবেচনা থেকেই আমরা কারিকুলামে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ কারিকুলামে যুক্ত করছি। একই সাথে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রমের বাইরেও যাতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সমন্বয়ে কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিস বাড়ানো যায় সেই উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। |