শিরোনাম: |
বৃদ্ধ ব্যক্তি মাত্রই জ্ঞানী নয়, কারণ মূর্খরাও বৃদ্ধ হয়। মুসলমান মাত্রই ধার্মিক নয়, কারণ মুসলমানদের মধ্যেই মুনাফিক রয়।
|
![]() ১. বৃদ্ধ মাত্রই জ্ঞানী। ২. মুসলমান মাত্রই ধার্মিক। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়ে, কিন্তু অভিজ্ঞতা থাকলেই যে জ্ঞানী হওয়া যায়, তা নয়। তেমনি, কোনো ব্যক্তি মুসলিম পরিবারে জন্মালেই সে প্রকৃত ধার্মিক হয়ে ওঠে না। এই নিবন্ধে আমরা এই দুটি ভুল ধারণা বিশ্লেষণ করব এবং সত্যতা খোঁজার চেষ্টা করব। বৃদ্ধ ব্যক্তি মাত্রই জ্ঞানী নয়, কারণ মূর্খরাও বৃদ্ধ হয় প্রবাদ আছে, "বয়স বাড়লেই মানুষ জ্ঞানী হয়"—কিন্তু এটি সর্বদা সত্য নয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়তে পারে, তবে এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিলে, কেবল সময়ের প্রবাহ একজন মানুষকে প্রকৃত জ্ঞানী করে না। ১. জ্ঞান ও বয়সের সম্পর্ক জ্ঞান অর্জনের জন্য বয়স নয়, প্রয়োজন জিজ্ঞাসু মন ও শেখার আগ্রহ। একজন তরুণ ব্যক্তি পড়াশোনা, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, যেখানে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি হয়তো সারা জীবন শুধু সাধারণ কাজ করেই কাটিয়ে দিয়েছেন, কোনো নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেননি। ২. মূর্খও বৃদ্ধ হয় মূর্খতা বয়সের সঙ্গে দূর হয় না, যদি মানুষ সচেতনভাবে জ্ঞান অর্জন না করে। অনেক মানুষ কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও ভুল ধারণার মধ্যেই সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। ফলে তাদের বয়স বাড়লেও বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির প্রসার ঘটে না। বরং, অনেকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি গোঁড়া ও সংকীর্ণমনা হয়ে পড়েন। ৩. প্রকৃত জ্ঞানী কারা? যে ব্যক্তি সারাজীবন জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেন, বই পড়েন, গবেষণা করেন, সমাজের বাস্তবতা বোঝেন এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেন—তাঁকেই প্রকৃত জ্ঞানী বলা যায়। বয়স বাড়লে মানুষ জীবনের অনেক কিছু দেখে, তবে যদি সে পর্যবেক্ষণ থেকে শিক্ষা না নেয়, তবে সে জ্ঞানী হতে পারবে না। মুসলমান মাত্রই ধার্মিক নয়, কারণ মুসলমানদের মধ্যেই মুনাফিক রয় ইসলাম ধর্ম অনুসারে, প্রকৃত ধার্মিক হওয়ার জন্য কেবল মুসলমান হওয়া যথেষ্ট নয়, বরং ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো পালন করাই গুরুত্বপূর্ণ। ১. মুসলমান হওয়া বনাম ধার্মিক হওয়া অনেকে মুসলিম পরিবারে জন্মান বলে নিজেদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধার্মিক মনে করেন। কিন্তু প্রকৃত ধার্মিক হওয়ার জন্য বিশ্বাস, আমল, নৈতিকতা ও সততা থাকা জরুরি। শুধু নামের পাশে "মুসলিম" লেখা থাকলেই কেউ প্রকৃত মুসলমান হয়ে যান না। ২. মুনাফিকদের পরিচয় ইসলামের দৃষ্টিতে "মুনাফিক" হলো সেই ব্যক্তি, যিনি মুখে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করেন, কিন্তু কাজে ও অন্তরে বিশ্বাস রাখেন না। হাদিসে এসেছে, "মুনাফিকের তিনটি লক্ষণ আছে—যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, ভঙ্গ করে; এবং যখন তাকে কোনো আমানত দেওয়া হয়, সে বিশ্বাসঘাতকতা করে" (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৩)। ৩. মুনাফিকদের প্রভাব মুনাফিকরা সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করে। তারা ধর্মের নামে ভণ্ডামি করে এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। সত্যিকারের ধার্মিকরা নম্র, বিনয়ী ও মানবকল্যাণে ব্রতী হন, কিন্তু মুনাফিকরা কেবল বাহ্যিক ধর্মীয় আচরণ দেখিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। ৪. প্রকৃত ধার্মিক কারা? যারা ইসলামিক আদর্শ ও নৈতিকতা মেনে চলে। যারা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল, সত্যবাদী ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়। যারা ইসলামের মূল শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করে এবং নিজেকে আত্মশুদ্ধির পথে রাখে। বয়স বাড়লেই মানুষ জ্ঞানী হয় না, যদি সে জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা না করে। তেমনি, মুসলমান পরিবারে জন্মালেই কেউ প্রকৃত ধার্মিক হয় না, যদি সে ইসলামকে সঠিকভাবে না অনুসরণ করে। প্রকৃত জ্ঞানী হতে হলে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, চিন্তার গভীরতা বাড়াতে হবে, এবং অভিজ্ঞতা থেকে শেখার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর প্রকৃত ধার্মিক হতে হলে শুধু নামের মুসলমান নয়, বরং ইসলামিক নৈতিকতা ও আদর্শের বাস্তব চর্চা করতে হবে। সত্যিকারের জ্ঞানী ও ধার্মিক হওয়া নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছা, শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের ওপর, জন্ম বা বয়সের ওপর নয়।
|