শিরোনাম: |
এইচআরডব্লিউর আহ্বান, বাংলাদেশে আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার
|
বুধবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরাপত্তা খাত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তারা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অধীনে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং প্রায় ২,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক। বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের ফলে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, তবে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে না অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করা, বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত অবিলম্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়া। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালানো, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণগ্রেফতার ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে আনুমানিক ১,৪০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে মারা গেছে। প্রতিবেদনে এটিকে ‘একটি ভয়াবহ চিত্র’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ‘জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য জবাবদিহিতা ও বিচার অপরিহার্য সাম্প্রতিক শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ৭ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর ছাত্র আন্দোলনকারীরা ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা তার পরিবারের সম্পত্তি ও দলীয় নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যা একটি স্মারক জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সমর্থকরা একদল ছাত্রকে সাবেক এক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এতে গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটে। এরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করে এবং ঘোষণায় জানায়, ‘পতনশীল স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে জড়িত শয়তানদের নির্মূল করা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনাকে সহিংসতার উসকানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস বলেন, ‘আইনের শাসনের প্রতি সম্মানই নতুন বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য, যা আমরা একসঙ্গে গড়ে তুলছি। পুরনো ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশের পথে হাঁটবো না হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, যেকোনো মতাদর্শের মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা মৌলিক মানবাধিকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এ অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া এবং বলপ্রয়োগের আগে সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ উপায় প্রয়োগ করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত আগামী মার্চে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা, যাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা চাওয়া যায়। ‘বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন ধরে হাসিনা প্রশাসনের দমন-পীড়নে ক্ষুব্ধ। তারা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা চায়, তবে তা অবশ্যই মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে,’ বলেন মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি আরও বলেন, যেকোনো অপরাধের বিচার হওয়া উচিত, তবে যখন রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ বিরোধীদের ‘শয়তান’ হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন এটি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা কখনোই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে হাসিনা শাসনামলের নিষ্ঠুর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে কোনো মন্তব্য উঠে আসেনি। যেটি গতকাল দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে, হাসিনা সরকার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরােধীদের হত্যা করতে হাসিনার নির্দেশ ছিল তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, টার্গেট করেই শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গন্ডগোল সৃষ্টিকারীদের’ গ্রেফতার, হত্যা এবং হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা। এসব গুরুতর তথ্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে পাওয়া যায়নি।
|