সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫ ৩ চৈত্র ১৪৩১
শিরোনাম: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট, 'ওআইসি প্রতিনিধিদের সহায়তা চাইল ইসি''      পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গঠন করা যাবে না: ''প্রধান উপদেষ্টা''      ইয়াং জেনারেশন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে - মির্জা ফখরুল      ২০১৪ সালে আ.লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের কী সমঝোতা হয়েছিল জানালেন সাবেক ''সেনাপ্রধান''      পত্রিকার পাতা খুললেই হতাশ হন মির্জা ''ফখরুল''      পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ''আজ''      পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন ''প্রধান উপদেষ্টা''      
ভালোবাসা দিবস ইসলামের দৃষ্টিকোণ ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০০ পিএম |

ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি, যা ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। তবে, যখন আমরা ভালোবাসা দিবসের কথা শোনি, তখন আমাদের সামনে যে ছবি উঠে আসে তা প্রায়ই আধুনিক, বাণিজ্যিক এবং রোমান্টিক প্রেমের উদযাপনের প্রতিচ্ছবি। ইসলামে ভালোবাসার ধারণা অনেক বিস্তৃত এবং তা কেবলমাত্র এক দিনের উদযাপনের বিষয় নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি নৈতিকতা, আন্তরিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মানের প্রকাশ।

১. ভালোবাসার মৌলিক ধারণা ইসলামে
ইসলামে ভালোবাসা শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা:
 কোরআনের অন্যতম সূরা রুম (৩০:২১) এ বলা হয়েছে,

 "আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মতো সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে শান্তি ও স্নেহ খুঁজে পাও।"
 এই আয়াতে স্পষ্ট হয়েছে যে, বৈধ দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা হলো শান্তি, করুণা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।

পারিবারিক ও সামাজিক ভালোবাসা:
 ইসলামী নীতিতে পিতা-মাতার প্রতি সেবা, ভাইবোনের প্রতি সদয়তা ও প্রতিবেশীদের সহানুভূতি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন,

 "তোমরা একে অপরকে ভালোবাসা ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।"
 এ থেকে বোঝা যায়, আন্তরিক ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা জীবনের অপরিহার্য উপাদান।

২. ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি ও আধুনিক রূপ
ঐতিহ্য ও ইতিহাস:
 ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি মূলত প্রাচীন রোমান উৎসব লুপারকেলিয়া থেকে শুরু হলেও, পরবর্তীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী ও মধ্যযুগীয় রোমান্টিক আদর্শ দ্বারা এ রূপান্তরিত হয়।
আধুনিক বাণিজ্যিকীকরণ:
 ২০শ ও ২১শ শতাব্দীতে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই দিনটি একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে ফুল, চকলেট, কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমের প্রকাশ ঘটানো হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:
 আজকের বিশ্বে ভালোবাসা দিবসকে শুধুমাত্র রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন হিসেবে দেখলেও, অনেক ক্ষেত্রে এটি পারিবারিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মানবিক ভালোবাসারও প্রতিফলন ঘটায়।

৩. ইসলামের দৃষ্টিকোণ ভালোবাসা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা
ইসলামী দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস নিয়ে বিভিন্ন মতামত বিদ্যমান:
ঐতিহ্যগত বিরোধিতা:
 অনেক ইসলামি স্কলার মনে করেন, ভালোবাসা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণ ও পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের মতে,

 "ভালোবাসা প্রতিদিন উদযাপনের বিষয়, কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়।"
 ইসলামে প্রেম, করুণা ও সহমর্মিতা জীবনের প্রতিটি ক্ষণে থাকা উচিত—এই মূল্যবোধগুলো শিক্ষা, পরিবার ও সামাজিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বিচিত্রতা:
 কিছু মুসলিম সমাজে, বিশেষ করে যেখানে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব প্রবেশ করেছে, সেখানে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হলেও, সেক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন হিসেবে নয়, বরং পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক সহমর্মিতার একটি সংস্কার হিসেবে পালিত হয়।
 তবে, এ ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো—ভালোবাসার প্রকাশ হোক নৈতিক ও ইসলামী বিধানের সীমানার মধ্যে।

নির্দেশনা ও শিক্ষা:
 একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শেখানো যে,
ভালোবাসা হলো আল্লাহর উপহার, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য ও শান্তি নিয়ে আসে।
বৈধ ও সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা, যেমন বৈধ দাম্পত্য ও পারিবারিক বন্ধন, ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে, প্রাথমিকভাবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সত্যিকারের ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বার্তা বহন করা, যা প্রতিদিনের জীবনে অনুশীলন করা যায়।

৪. ভালোবাসার সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভালোবাসা দিবস—এটি একদিকে যেমন আধুনিক বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের ছদ্মবেশ ধারণ করে, অন্যদিকে এর মূলে রয়েছে মানবিক ও আন্তরিক ভালোবাসার বার্তা। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, ভালোবাসা শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, শিক্ষা, পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।
একজন শিক্ষক হিসেবে আমার আশা,
আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালোবাসার সঠিক অর্থ—আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ব—শুধু একটি দিন নয়, প্রতিদিনের জীবনে অনুশীলন করবে।
ভালোবাসা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণে নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধারে তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হবে।
এই ভাবনাই আমাদের শেখায়, যে প্রকৃত ভালোবাসা হলো সারাজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য শিক্ষা—যা প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ এবং ইসলামী আদর্শের আলোকে জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

 ভালোবাসা দিবসকে ইসলামী দৃষ্টিতে যদি আমরা মূল্যায়ন করি, তবে দেখতে পাবো—ভালোবাসা একটি সার্বিক জীবনমূল্য, যা প্রতিদিনের আচরণ, শিক্ষা ও সামাজিক বন্ধনে রূপান্তরিত হওয়া উচিত। ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী, ভালোবাসা হোক সঠিক পথে, শুদ্ধ ও আন্তরিক; কারণ, সত্যিকারের ভালোবাসা প্রতিটি দিনের উদযাপন, প্রতিটি ক্ষণের প্রেরণা।






আরও খবর


সম্পাদক : এ এইচ এম তারেক চৌধুরী, সহ-সম্পাদক: এম এ ওয়াহেদ- ০১৮৫৯-৫০৬৬১৪
প্রধান কার্যালয় : নাহার ম্যানশন ৫ম তলা, ১৫০ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা -১০০০।
নিউজ রুম: ০২৪৭১১০৪৫৪, ০১৬৭৭২১৯৮৮০।
e-mail: [email protected], web: 71sangbad.com