শিরোনাম: |
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার শঙ্কা
|
![]() ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যটনমুখর এই অঞ্চলে এ ধরনের নৃশংস আক্রমণ গত ১৫ বছরে আর দেখা যায়নি। তবে ভারত-শাসিত এলাকাটি গত তিন দশক ধরেই সশস্ত্র বিদ্রোহের কবলে রয়েছে। হামলার পরপরই পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর একটি দল আহত পর্যটকদের সরিয়ে নেয় এবং হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কাশ্মিরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। অন্যদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে নয়াদিল্লিতে ফিরে আসেন এবং তিনি বুধবার সকালে একটি বৈঠক করেন। হামলার ঘটনাটি এমন সময়েই ঘটেছে, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে সফরে আছেন। তিনি সোমবার এসেছেন এবং বৃহস্পতিবার তার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই হামলায় কী কী ঘটেছে, কারা হতাহত হয়েছেন, কারা এর পেছনে রয়েছে, কেন এই হামলা হলো, এর পটভূমি কী এবং এর ফলে কাশ্মির ও গোটা অঞ্চলের জন্য কী বার্তা বহন করছে- এসব বিষয় নিয়েই এখন বিশ্লেষণ চলছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা সেই বিশ্লেষণ তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। কাশ্মিরে সেদিন কী হয়েছিল? কাশ্মিরি ভাষায় পেহেলগাম এর অর্থ ‘মেষপালকদের উপত্যকা।’ ভারত-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের এই এলাকাটি অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র, যা শ্রীনগরের প্রধান শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা মঙ্গলবার আল জাজিরাকে জানিয়েছে, এলাকাটি পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত ছিল। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছদ্মবেশী পোশাক পরা একদল সশস্ত্র ব্যক্তি কাছাকাছি একটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে। নিরাপত্তা বাহিনী যে তথ্য প্রকাশ করেনি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলাকারীরা বাইসারান তৃণভূমিতে নির্বিচারে গুলি চালায়। বাইসারান একটি মনোরম উঁচু এলাকা যেখানে কেবল পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়েই যাওয়া যায়। হঠাৎ গুলির শব্দে অনেক পর্যটকই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরের একজন পর্যটক সিমরান চন্দানি বলেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে তিনি এই আক্রমণ থেকে বেঁচে যাবেন। তিনি বলেন, পহেলগামকে ‘মিনি-সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমরা চা ও ম্যাগি নুডলস খেয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এমন সময় আক্রমণ শুরু হয়। এরপর সবকিছু বদলে গেল। ‘আমি দেখলাম অনেক মানুষ নেমে আসছে। আমরা ভেবেছিলাম কোনো বেলুন হয়ত ফেটে গেছে। মানুষ একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছে, কেই একজন আমাদের বললো, ওখানে হামলা হয়েছে,’ তিনি স্মরণ করে বলেন, বেশিভাগ পুরুষদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। হতাহতদের সম্পর্কে যা জানা গেছে হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক ডজনেরও বেশি। নিহত পর্যটকদের প্রায় সবাই বেসামরিক নাগরিক। তবে নিহতদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানা থেকে মধুচন্দ্রিমায় আসা একজন ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাও রয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের পান্ডুরঙ্গাপুরমের ৬৮ বছর বয়সী একজন সাবেক ব্যাংকার নিহত হয়েছেন। তিনি তার স্ত্রীর সাথে এই অঞ্চলটি ঘুরে দেখেছিলেন। এছাড়াও নিহতদের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের একজন রিয়েলটর, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার একজন হিসাবরক্ষক, উত্তরাঞ্চলীয় উত্তর প্রদেশের একজন সিমেন্ট ডিলার এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার একজন উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিও ছিলেন। নিহতদের মধ্যে নেপালের একজন বিদেশী নাগরিকও ছিলেন। কে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে? জম্মু ও কাশ্মিরে সক্রিয়ভাবে বিদ্রোহে জড়িত সংগঠন রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এক বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। টিআরএফকে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলার সাথে ভারতীয় নাগরিকদের কাশ্মিরে বসবাস ও কাজ করার জন্য হাজার হাজার আবাসিক পারমিট হস্তান্তরের সংযোগ রয়েছে। তবে আল জাজিরা ওই বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। ভারত সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মিরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেয়। সেখানে আরো বেশি কেন্দ্রীয় শাসন জোরদার করে এবং সাবেক এই রাজ্যটিকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। এই পদক্ষেপ ভারত সরকারের জন্য যারা কাশ্মিরি নন তাদের বসবাসের অনুমতি প্রদানের পথ প্রশস্ত হয়, যা আগে নিষিদ্ধ ছিল। ফলে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তাদের সন্দেহ যে চারজন হামলাকারী এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল - তাদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানের এবং দু’জন ভারত-শাসিত কাশ্মিরের। অতীতেও কি পর্যটকদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে? কাশ্মিরের চলমান অস্থিরতার মধ্যেও পর্যটকদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বিরল। পহেলগামে ১৯৯৫ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী আল-ফারান ছয়জন বিদেশী পর্যটককে অপহরণ করে। একজনকে হত্যা করা হয়, অন্যজন পালিয়ে যায় এবং বাকি চারজনকে কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না। পহেলগামের নুনওয়ানে ২০০০ সালে ২১ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীসহ ৩২ জনকে হত্যা করা হয়। এর এক বছর পর একই এলাকার শেষনাগ হ্রদের কাছে ১১ জন তীর্থযাত্রী এবং দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ১৩ জন নিহত হন। ২০১৭ সালে অনন্তনাগ জেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আটজন তীর্থযাত্রী নিহত হন। গত বছরের জুন মাসে জম্মুর কাঠুয়ার দক্ষিণ অংশে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে আটজন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন। কিন্তু ২০০০ সালে নুনওয়ানে হামলার পর মঙ্গলবারের হামলাটি পর্যটকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। সামগ্রিকভাবে ২০০১ সালের অক্টোবরে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্য আইনসভার বাইরে বোমা হামলার পর থেকে কাশ্মিরে এত বড় কোনো হামলায় প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০১ সালে বোমা হামলায় ৩৫ জন নিহত হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের হামলার প্রকৃতি ও মাত্রা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হতবাক করে দিয়েছে। “আমরা পেহেলগামে গিয়েছিলাম, আর আমি তৃণভূমিতে চেয়ারে বসে ছিলাম, ঠিক তখনই তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম, যা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে,” বলেন পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ৬৫ বছর বয়সী পর্যটক বিনু বাই, যিনি অনন্তনাগের জেলা হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। “সবাই দৌঁড়াতে শুরু করে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে গুলিটি আমার বাহুতে লেগেছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ৬৫ বছর বয়সী পর্যটক বিনু বাই অনন্তনাগের জেলা হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পেহেলগামে গিয়েছিলাম। আমি তৃণভূমিতে চেয়ারে বসে ছিলাম, ঠিক তখনই তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। সবাই দৌঁড়াতে শুরু করে। এর মধ্যে একটি গুলি আমার বাহুতে লাগে। ‘আমরা ভেবেছিলাম কাশ্মির শান্তিপূর্ণ, আমরা জানতাম না এমনটা ঘটবে,’ বলেন তিনি। স্থানীয় বিরোধী দলের সাথে যুক্ত তরুণ রাজনীতিবিদ ইলতিজা মুফতি বলেন, পেহেলগামে সাধারণত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কড়া টহল দেয়। ‘বাইসারনের মতো জায়গায় এই ধরনের হামলা হওয়া অত্যন্ত মর্মান্তিক, তিনি বলেন। ভারত সরকার কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে? ভারতের নেতারা বুধবার বৈঠক করেছিলেন। মোদি তার সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরে আসেন। তার জেদ্দায় একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করার কথা ছিল। এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ হামলার পেছনে যারা রয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের রেহাই দেয়া হবে না! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও শ্রীনগরে ছুটে যান এবং অঞ্চলের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে কাশ্মিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ‘ফাঁকা বুলি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। গান্ধী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ। জম্মু ও কাশ্মিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অর্থহীন দাবি করার পরিবর্তে সরকারের এখনই জবাবদিহি দেয়া উচিত। একইসাথে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং নিরীহ ভারতীয়রা এভাবে প্রাণ না হারায়। ভারত কি পাকিস্তানে হামলা চালাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হামলার জবাবে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেন, ‘এটি একপ্রকারের যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা এটিকে এভাবেই দেখছি। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সেই বক্তৃতার মাত্র কয়েকদিন পরেই হামলাটি হয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ের সাবেক কর্মকর্তা কার্থা গত সপ্তাহের পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের ভাষণের কথা উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রতি আবারো সমর্থন জানান। কার্থা বলেন, ‘পহেলগামের হামলা ১৬ এপ্রিল মুনিরের ভাষণের সাথে মিলে যায়। পাকিস্তান যদি এই হামলার তীব্র নিন্দা করে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তবেই একটি গুরুতর সংকট এড়ানো যাবে। বুধবার ভোরে পাকিস্তান তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই সমগ্র কাশ্মিরকে নিজেদের দাবি করে এবং উভয় দেশই কাশ্মীরের একটি করে অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও এই বিবৃতিতে ভারতে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দেশবাসীর চাপের মুখে রয়েছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। দিল্লিভিত্তিক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবা নকভি পাকিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সাথে ভারতের তুলনা করে বলেন, ভারতের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভাবনাচিন্তাপূর্ণ ও স্থির। তিনি মোদির হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারতের কথা বলতে গেলে, এখানকার বেশিভাগ মানুষ মনে করে বিজেপি সরকার সেখানে বোমা ফেলবে এবং সবকিছুর প্রতিশোধ নেয়া হবে। কিন্তু এটা এত সহজ নয়।" কাশ্মিরের জন্য এই আক্রমণের অর্থ কী? কাশ্মিরের রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড অন্য যে কারো চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কাশ্মিরের সাধারণ মানুষেরই। বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) একজন কাশ্মিরি আইন প্রণেতা ওয়াহিদ উর রহমান পারা আল জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আমার মনে হয় না আমি এটিকে অন্য কিছু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। যে এটি করেছে সে কেবল কাশ্মিরিদের, আমাদের অর্থনীতির এবং গত কয়েক মাসে ফিরে আসা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে চায়। পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি এই অঞ্চলের মোট জিডিপির প্রায় সাত শতাংশ যোগ করে। এছাড়াও পর্যটকের ভিড়কে ভারতের শাসকদল বিজেপি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও ব্যবহার করে। বিজেপি বলে, তারা কাশ্মিরে শান্তি ফিরে এনেছে। কিন্তু বাস্তবে পেহেলগাম হামলার আগেও এই অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। ভারতের সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকেই রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন কিছু আইন দিয়ে, যেগুলোর আওতায় কাউকে বিচারের আগে দীর্ঘদিন আটক রাখা যায়। গত বছর অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর কাশ্মিরে প্রথম নির্বাচিত প্রধান নির্বাচনের জন্য ভোট দেয়া হয়েছিল। জনপ্রিয় প্রাদেশিক রাজনীতিবিদ ওমর আবদুল্লাহ হারানো স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতিতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নতুন আইনের মাধ্যমে তার শাসন কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখেছেন। পেহেলগামে হামলার পর কাশ্মিরের হোটেল ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং হামলাকারীদের নিন্দা করেছেন। পেহেলগামের হোটেল ব্যবসায়ী ও হোটেলমালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় মানুষের প্রাণহানি। এখন আমাদের মূল চিন্তা পর্যটন নয়।’ এদিকে শ্রীনগরের ৩১ বছর বয়সী বাসিন্দা নাদিয়া ফারুক বলেন, ‘কাশ্মিরের মানুষ অতিথিপরায়ণ ও আন্তরিক- এই পরিচয়েই পরিচিত। এত প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা শান্তি চাই, রক্তপাতের শেষ চাই। আমরা শোকাচ্ছন্ন।
|