শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
শিরোনাম: সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ করল উইনসাম স্মাইল ফাউন্ডেশন       অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে, মোকাবেলায় বাড়ছে না বরাদ্দ       ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ৩৩তম মিলিয়নিয়ার হলেন রাজশাহীর মাদ্রাসা শিক্ষক আমিনুল       জাপানের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড সনি’র জেনুইন পণ্য এখন চট্টগ্রামে       এয়ার টিকিট ফ্রি পাওয়ার সুযোগ       ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১১৭৩২       দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ      
দূর্নীতির দায়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক এ কে এম সাহিদ রেজা অপসারন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৭১ সংবাদ ডট কম :
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৫৪ পিএম আপডেট: ২৭.০৪.২০২১ ৫:২৩ পিএম |

দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ৭১ সংবাদ ডট কম এর সংবাদ প্রকাশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে এ কে এম সাহিদ রেজাকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অপসারনের সুপারিশ করেন। 

উল্লেখ্য বিগত দিনে কয়েক দফায় মার্কেন্টােইল ব্যাংকের পরিচালক সাহিদ রেজা এর দূর্নীতির বিভিন্ন চিত্র নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান বিষয়টি আমাদের নলেজে এসেছে, তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ ২৭শে এপ্রিল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে দূর্নীতিবাজ সাহিদ রেজা’কে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালক পদ থেকে অপসারনের আদেশ প্রদান করা হয় এবং আগামী ২ বছরের জন্য তিনি কোন ভাবেই ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত হতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বিস্তারিত বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শনে এ.কে.এম সাহিদ রেজা এর বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিঃ থেকে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিঃ এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিঃ এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব প্রশান্ত কুমার হালদার (পি.কে. হালদার) এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন কাগুজে / অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতি , জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ঠ ঋনের মধ্যে ৪টি অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান যথা- এমটিবি মেরিন লিঃ , উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ ,কনিকা এন্টারপ্রাইজ , গ্রিনলাইন ডেভলপমেন্ট লিঃ এর নামে সৃষ্ঠ/গৃহীত  ঋনের অর্থের একটি  অংশ রেজার স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে ঋন নিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করায়  এবং  পি.কে. হালাদারের দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে রেজার সম্পৃক্ততা, ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিঃ ঋনের নামে অর্থ সরানোর মাধ্যমে ঋন নিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন অভিযোগ আনা হয়। 

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার আওতায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি: এর পরিচালক পদ হতে এ কে এম সাহিদ রেজাকে অপসারনের আদেশ প্রদান করা হয়।  ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৬ (৩) ধারার বিধান অনুযায়ী এ আদেশের তারিখ থেকে দুই বছর তিনি উক্ত ব্যাংক কোম্পানী বা অন্য কোন ব্যাংক কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহন করতে পারবেন না। 


পাঠকদের সুবিধার জন্য এর আগে এ কে এম সাহীদ রেজার বিরুদ্ধে ৭১ সংবাদ ডট কমে প্রকাশিত সংবাদ গুলো  নিচে তুলে ধরা হলো। 

১৫০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও ভোগ করতে পারেনি পিকে হালদার। বেশিরভাগ অর্থসম্পদ দখলে রেখেছেন তা সহযোগীরা। কিছুটাকা বিদেশে পাচার করেও কাজে লাগাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দুদক। 

আর্থিক খাতে সংঘবদ্ধ চক্র তৈরী করেও ১৫০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে দুদক ৬২ ব্যংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে তার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পিকে হালদার সংশ্লিষ্টতার এখনও পর্যন্ত ২৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে ৫ জন। তাদের বক্তব্য অনুষারে আত্মসাৎ করা টাকার ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে ফাস্ট ফাইনান্স এর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আলমের কাছে। ১০০০ কোটি টাকা রয়েছে আলামিন রিয়েলস্টেট এর চেয়ারম্যান সামসুল আলামিন এর কাছে।

 আর মার্কেন্টাইল ব্যংক এর পরিচালক সাহেদ রেজার কাছে ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া তার অন্য সহযোগীদের কাছে আছে কমপক্ষে ১০,০০০ কোটি টাকা। আর ১০০০ কোটি টাকার অর্থ সম্পদ বিচ্ছিন্ন ভাবে অনেকে ভোগ করছে। পাশাপাশি ফাস্ট ফাইন্সএর ১০৫৭ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুদক। এসব বিষয়ে পরিষ্কার করে গণমাধ্যমে বলতে রাজি নয় দুদক। দুদকের আইনজীবি বলছে পিকে হালদার সর্বসাকুল্যে ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বিদেশে। কিন্তু সেই টাকার বড় কিছু অংশ জব্দ হয়েছে এমন তথ্য আছে দুদকের কাছে। পিকে হালদারে আত্মসাৎ করা টাকা যাদের কাছে আছে তাদের চিহ্নিত করে অবৈধ টাকা জব্দ করবে দুদক।
 
আমানতকারীদের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া পিকে হালদারের অন্যতম ভাগীদার একেএম সাহেদ রেজা। পিকে হালদারের মাধ্যমে এমটিবি মেরিন লিমিটেড এর ৬০কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয় ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই ঋণ হিসাব থেকে একেএম সাহেদ রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং, পদ্মা ব্লিচিং, ফ্যাশন প্লাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে থাকা হিসাবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা জমা হয়।

উইন্টেল ইন্টারন্যাশনালের ৬৮কোটি টাকা ঋণের ১৪কোটি টাকাও যায় সাহেদ রেজার ৪ প্রতিষ্ঠানে। গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ৬৪ কোটি টাকার ঋণের ৭ কোটি টাকা জমা হয় পদ্মা ওয়েভিং ও ফ্যাশন প্লাসের হিসাবে। এভাবে পিকে হালদারের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের ২৮ কোটি টাকা জমা হয় সাহেদ রেজার বিভিন্ন হিসাবে। বিএফআইইউর প্রতিবেদনে পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রনাধীন আইএলএফএসএল এর অনৈতিক ঋণ সুবিধা সাহিদ রেজা পেয়েছেন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।সূত্র মতে, সাহেদ রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা কালীন ৯৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ১০টি লিজিং কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড, বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফাস্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড এবং এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

 এর বিপরীতে সুবিধা হিসেবে তিনি হয় ক্যাশ টাকা অন্যথায় নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে নেয়া এই ঋণের পরিমানও ৮৮৩ কোটি টাকার বেশি। ওই সময়ে সাহেদ রেজা কয়েকটি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি থেকে ৮৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যে সব প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যালুর এ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন প্লাস লিমিটেড, পদ্মা ব্লিচিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেড, রেজা ফেব্রিকস লিমিটেড এবং রেজা ফ্যাশন লিমিটেড।

২রা জুন ১৯৯৯ সালে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল দিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর যাত্রা শুরু হয় যার বর্তমান পেইড আপ ক্যাপিটাল ৯৮৪ কোটি টাকা। আওয়ামীলীগ সরকারের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল সাহের নেতৃত্বে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে সাহেদ রেজা ০.২৮% শেয়ার ধারণ করে প্রভাব খাটিয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এর পদ বাগিয়ে নেন এবং বিভিন্ন বেনামী ঋণ প্রদান করে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিটি কোম্পানীর পরিচালকদের পেইড আপ ক্যাপিটালের ২.০০% শেয়ারের ধারণের বাধ্যবাধতা আসে। সে অনুযায়ী জনাব সাহিদ রেজার ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি হয়ে পরিচালক পদ শূণ্য হয়। সেই সময় সাহেদ রেজা ২০১৪ সালে পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এর মাধ্যমে পিকে হালদারের যোগসাজসে ৩৪ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করে রাতারাতি ০.২৮% শেয়ার থেকে ৫.০০% শেয়ারের মালিক হয়ে যান। পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড-এ ঘোষনা দিয়ে শেয়ার ক্রয় করতে হবে। কিন্তু জনাব সাহেদ রেজা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর নিয়ম লংঘন করে ঘোষণা ছাড়াই পিকে হালদারের সহযোগিতায় অনৈতিকভাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর ৫.০০% শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে পুনঃরায় পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন।

 জনাব সাহেদ রেজার পরামর্শক্রমে পিকে হালদার তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রেপটাইলস কোম্পানীর নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর ৫.০০% শেয়ার ক্রয়ের করেন এবং পরবর্তীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পিকে হালদার তার মনোনীত ব্যক্তিকে পরিচালনা পর্ষদের অন্তুরর্ভূক্তির জন্য দেনদরবার করেন যেখানে জনাব সাহেদ রেজার পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। পুনঃরায় পরিচালক পদে আসার পর জনাব সাহেদ রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডকে ব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, জনাব সাহেদ রেজা জীবনের প্রারম্ভে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এর মহাখালী শাখার একজন ক্যাশ অফিসার ছিলেন এবং ব্যাংকের শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকান্ড করায় তিনি চাকুরীচ্যুত হন। সেই ক্যাশ অফিসার আজ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন যিনি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের একজন নেতিবাচক ও আলোচিত চরিত্র যা ব্যাংকিং সেক্টরের অনেকেই জানেন।   

জনাব রেজার এহেন বিতর্কিত কর্মকান্ড করার পরও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি ছদ্মবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ দিয়ে নিজেই পরে তার সুবিধাভোগী হচ্ছেন। জনাব রেজা এর পুত্র জনাব রাকিম রেজা রুশোকে প্রভাব খাটিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর এসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন এবং স্ত্রী মিসেস জোবেদা বেগম বর্তমানে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান পদে আছেন। 

মূলতঃ জনাব রেজাই মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশন, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানী ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ কমিটির সমস্ত কর্মকান্ড ছদ্মবেশে অনৈতিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অর্থনৈতিক সুবিধাভোগ করে যাচেছন। জনাব রেজা এমনই একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি যার ভয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সর্বস্তরের লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত। ব্যাংকের সুশাসন ও কর্পোরেট কালচারের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এই লোকটি দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা রকম কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।  

একেএম সাহেদ রেজার যোগসাজসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে বড় অংকের ‘ঋণ ডাকাতি’র শক্ত অভিযোগ উঠেছে রতনপুর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। আর এই ‘ডাকাতি’তে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান জনাব একেএম সাহেদ রেজা। ‘ঋণ ডাকাতি’র বিষয়টি ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়েছে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চট্টগ্রামের জুবলী রোড শাখা থেকে ২৭.০৩.২০১৬ সালে ২শ কোটি টাকা জামানত বিহীন ঋণ চায় রতনপুর গ্রুপ।সোনালী, জনতা, রূপালী সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী ব্যাংকে রতনপুর গ্রুপের কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের পাশাপাশি মার্কেন্টাইল ব্যাংক জুবলী রোড শাখার প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পাওনা থাকায় এবং এসব ঋণ আদায় না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে নতুন ঋণ প্রস্তাব বিবেচনা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন জুবলী রোড শাখার তৎকালিন ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম। ‘শাখা ব্যবস্থাপক ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ‘ক্ষিপ্ত’ হন সাহেদ রেজা এবং প্রস্তাবটি প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। শাখার সুপারিশ না থাকা সত্ত্বেও রেজার ক্ষমতা বলে বিষয়টি পর্ষদ সভায় উত্থাপিত হয়। তবে শাখার সুপারিশ না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক ও এক পরিচালকের বিরোধীতায় ওই ঋণ প্রস্তাব পাশ হয়নি তখন।’


ওই চিঠিতে বলা হয়, এর কিছুদিন পর রতনপুর গ্রুপ ‘বিনা জামানতে’ নতুন করে আবার ২৫০ কোটি টাকার ঋন আবেদন করে। বিভিন্ন ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী থাকায় বিনা জামানতে এ ঋণ প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান শাখা ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম। তখনও আবার ওই শাখা ব্যবস্থাপকের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন সাবেক চেয়ারম্যান সাহেদ রেজা। এই অনিয়ম থেকে বাঁচার জন্য ওই শাখা ব্যবস্থাপক এমবিএল/জেআরবি/সিআর/২০১৬/১০৮৮ পত্র মুলে এবং ইমেইলে সাবেক চেয়ারম্যান শাহেদ রেজা বরাবর রতনপুর গ্রুপের নিকট বিভিন্ন ব্যাংকের দায় দেনার বিস্তারিত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা তুলে ধরেন এবং তাঁর নির্দেশনা কামনা করেন।

 কিন্তু সাহেদ রেজার কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি শাখা ব্যবস্থাপক। সাহেদ রেজা ওই শাখা ব্যবস্থাপকের পাশে না দাঁড়িয়ে ‘ঋণ লুটেরা’দের পক্ষে অবস্থান নেন। ঋণ জালিয়াতি রোধ করার চেষ্টা করে পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে ‘শাস্তি’ পান ওই শাখা ব্যবস্থাপক। সাহেদ রেজার নির্দেশে একজন মেধাবী ও দক্ষ শাখা ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলামকে প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয় এবং রাঙ্গামটি শাখার ব্যবস্থাপককে জুবলী রোড শাখায় নিয়ে আসে।  বরং পরবর্তীতে দুষ্টুচক্রের সাথে আপোষ না করে শাখা ব্যবস্থাপক এম আমিরুল ইসলাম মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চাকুরী ত্যাগ করে অন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকুরী নিয়ে চলে যান।' 

জনাব রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর গ্রাহক মেসার্স সানজিদা ট্রেডিং কর্পোরেশকে টেন্ডারের মাধ্যমে বহু কাজ বাগিয়ে দিয়েছেন এবং নিজে তার সুবিধাভোগী হয়েছেন। জনাব রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর ফেনী জোনাল অফিস নিজের জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তার সুবিধা ভোগ করেছেন এবং করছেন। জনাব রেজার গ্রামের বাড়ীর ফেনীর অজপাড়া-গাঁ যার আশেপাশে কোন ব্যাংকের শাখা নেই সেই নিভৃত বন জঙ্গলের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর রাজনগর শাখা খুলেছেন। শাখাটি বরাবরই লোকসানী শাখা ছিল কিন্ত জনাব রেজা ফেনী শাখার ডিপোজিট ও অন্যান্য ম্যাকানিজম করে কাগজে কলামে লাভজনক শাখা হিসাবে দেখান যা কখনও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাম্য নয়। 



বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক ইতোমধ্যে জনাব রেজাসহ তার পরিবারবর্গ ও কর্মচারী - জনাব একেএম সাহেদ রেজা, মিসেস জোবেদা বেগম (স্ত্রী),  জনাব শওকত রেজা (ভাই), মিসেস নাহিদা রেজা (ভাই এর স্ত্রী), একেএম হারুনুর রশীদ, (কর্মচারী) ও জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া (কর্মচারী) গংদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া জনাব রেজার এহেন অনৈতিক কর্মকান্ড এর বিষয়টি দূর্নীতি দমন কমিশনে নথিভুক্ত হয়ে আছে যা যথাশীঘ্রই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে চলমান অবস্থায় রয়েছে।

 রেজার মত একজন অসৎ চরিত্রের লোক এখনও ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য থাকায় ব্যাংকের ডিপোজিটরদের মধ্যে শংকা দেখা দিয়েছে এবং দিনে দিনে ব্যাংকটি রেটিং কমে আসছে। তাছাড়া করসপন্ডিং ব্যাংকগুলোর সাথে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ট্যান্সজিকশন এর ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনাব আব্দুল জলিল এর পরে প্রতি বছর ১ জন করে বোর্ডের সকল সদস্যদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছিল। কিন্তু জনাব রেজা তার দূর্ণীতি ও প্রভাব খাটিয়ে পর পর ২ বার ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচত হন এবং পরবর্তী ৩য় মেয়াদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জন্য জোর তদবির করেন।

 নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যে, জনাব রেজা প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চাঁদা দেয়ার নামে ব্যাংক থেকে ৫ কোটি উত্তোলন করেন এবং ৩ কোটি টাকা প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে বাকী ২কোটি টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ব্যাংকের গোচরীভূত হওয়ায় ডিজিএফআই তত্তাবধানে জনাব রেজা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জনাব রেজা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তার একক প্রচেষ্টায় নিয়ম বহির্ভূত ভুলতা শাখাসহ অন্যান্য শাখায় বেনামে অনেক ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে যার সুবিধাভোগী সে নিজেই এবং সেই সব ঋণ ভবিষ্যতে শ্রেণীবিন্যাসিত হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়ে গেছে।

 রেজা তার প্রভাব খাটিয়ে জন প্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রায় ৩০০ লোকের চাকুরী দিয়েছেন যার প্রমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগে সংরক্ষিত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বায়োডাটা পিছনের পৃষ্ঠায় সাহেদ রেজার রেফারেন্স উল্লেখ আছে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নিরপেক্ষ অডিট করলে প্রমান মিলবে।জনাব রেজা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে ইতিপূর্বে ব্যাংকের প্রায় ২০০ জন মেধাবী কর্মকর্তার বিনা অপরাধে চাকুরী থেকে ছাটাই করেন। জনাব রেজার নির্দেশ অমান্য করে যে সকল ম্যানেজার ভবিষ্যতে কুঋণে পরিণত হবে এমন ঋণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে জোর পূর্বক পতদ্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকুরী থেকে অপশারণ করা হয়েছে যা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুশাসনের বিরোধী। 

 রেজার আগ্রাসী ঋণ বেচাকানার জন্য ইতিপূর্বে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তাই, সাহেদ রেজার মত একজন অসৎ ও হীনমানসিকতার ব্যক্তি বর্তমানে যার পরিবারসহ অনেকের ব্যাংক একাউন্টস বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক জব্দ করা হয়েছে যাকে শাস্তি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এর গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা ও ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত এর লক্ষ্যে অচিরেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে জনাব একেএম সাহেদ রেজাকে অব্যাহতি দেয়াসহ তাকে উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে






আরও খবর


Chief Advisor:
A K M Mozammel Houqe MP
Minister, Ministry of Liberation War Affairs, Government of the People's Republic Bangladesh.
Editor & Publisher: A H M Tarek Chowdhury
Sub-Editor: S N Yousuf

Head Office: Modern Mansion 9th Floor, 53 Motijheel C/A, Dhaka-1223
News Room: +8802-9573171, 01677-219880, 01859-506614
E-mail :[email protected], [email protected], Web : www.71sangbad.com