শিরোনাম: |
দেশের উত্তর-পূর্ব হাওড় অঞ্চলের সাত জেলার ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ
|
দেশের উত্তর-পূর্ব হাওড় অঞ্চলের সাত জেলায় আজ শুক্রবারের (৩ মে) মধ্যে ফসল তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসকে সামনে রেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ পরামর্শ দেয়। এ লক্ষ্যে হাওড় অঞ্চলগুলোতে মাইকিং, জনপ্রতিনিধি, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া এ সংক্রান্ত নির্দেশণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার করা হয়। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই ওই সাত জেলার হাওড়ের প্রায় ৯০ ভাগের মতো ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবার ধানের যে বাম্পার ফলন হয়েছে সেটার আশানুরূপ ফল পেতে আর কয়েকদিন রোদ থাকলেই সম্ভব হয়ে উঠবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প কম্পোনেট সি-ডিব্লিউসিএসআরপি প্রকল্পের পরিচালক ডা. শাহ কামাল খান ২৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত এক পরামর্শ বার্তায় উল্লেখ করেন, ৩ মে থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব হাওড় অঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা হাওড় অঞ্চলের কৃষকদেরকে বোরো ধান ৮০ ভাগ পরিপক্ক হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করে নিরাপদ ও শুকনো জায়গায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ধানের জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য দ্রুত নালা পরিস্কার, জমির আইল উঁচু করা, জমি থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে ফেলা, সেচ, সার ও বালাইনাশক দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। বৃষ্টির পর বালাইনাশক দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় ওই কর্মকর্তার বার্তায়। এছাড়া কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্বিক ফল এবং সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করতে বলা হয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘৩ মে’র মধ্যে হাওড় এলাকার ধান কাটার পরামর্শ ছিল। এটা বাড়িয়ে ৫ মে করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ হাওড়ের ৮৮ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান কাটতে আমরা হাওড় এলাকায় মাইকিং করেছি, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছি। এতে বেশ সুফল মিলেছে। সাধারন মানুষ কিছুদিন কষ্ট করলেও রোদের কারণে কৃষকের বেশ উপকার হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ধান শুকানোর কাজ শেষ হলে বাম্পার ফলনের সুফলও মিলবে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এবার এক লাখ ১১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এর মধ্যে হাওড়ে ছিলো ৩২ হাজার ১০০ হেক্টও জমি। বৃহস্পতিবার নাগাদ হাওড়ের ৮৭ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ৩ মে’র মধ্যে ধান কাটার যে নির্দেশনা ছিলো সেটা বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করে গেছি। যে কারণে এর সুফল মিলেছে।’ হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, বৃহস্পতিবার নাগাদ ৮৫ ভাগ ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনটি কারণে এবার ভালো ফলন ও সময় মতো ধান তোলা সম্ভব হয়েছে। প্রথমত, নীচু এলাকার বোরো বীজতলা করার সময় বলা হয় যেন একটু আগেভাগে অর্থাৎ ডিসেম্বরের দিকে করা হয়, কৃষকরা করেছেন। এছাড়া আমরা যে জাতগুলো রোপণের পরামর্শ দিয়েছি সেটিও তারা করেছেন। সর্বোপরি টানা ২০ দিনের মতো রোদ পাওয়ায় ৯-১০ মে এর মধ্যে যেসব ধান পাকার কথা এগুলো এক সপ্তাহ আগে পেকে যায়।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের পরিচালক ডা. শাহ কামাল খান বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে আমরা কৃষি বিভাগের বাইরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে অনুসারে সকলের সহযোগিতায় ভারি বৃষ্টিপাতের আগেই হাওড় অঞ্চলে এরই মধ্যে বেশিরভাগ ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে হাওড় এলাকার সব ধান কাটা হয়ে যাবে।’
|